Advertisement
E-Paper

মোদী-গড়ে ঝড় থামাল সনিয়ার জ্বর

শুরুটা হয়েছিল অম্বেডকর চৌরাহায় বাবাসাহেবের মূর্তিতে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে। খোদ নরেন্দ্র মোদীর গড়েই যখন তাঁর জন্য রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামল, তখন আর গাড়ির ভিতরে বসে থাকেননি সনিয়া গাঁধী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৩০
তখনও রোড শোয়ে। মঙ্গলবার বারাণসীতে সনিয়া গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

তখনও রোড শোয়ে। মঙ্গলবার বারাণসীতে সনিয়া গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

শুরুটা হয়েছিল অম্বেডকর চৌরাহায় বাবাসাহেবের মূর্তিতে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে। খোদ নরেন্দ্র মোদীর গড়েই যখন তাঁর জন্য রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামল, তখন আর গাড়ির ভিতরে বসে থাকেননি সনিয়া গাঁধী। হালকা হলুদ রঙের শাড়িতে কংগ্রেস সভানেত্রী যখন চলন্ত এসইউভি-র খোলা দরজার উপরেই বসে পড়ে জনতার অভিবাদন কুড়োচ্ছেন, তখন কে বলবে আগামী ডিসেম্বরে বয়স তাঁর সত্তর ছোঁবে।

মোদীর বারাণসীতে ঝড় তুলে দিয়েও অবশ্য শেষ রক্ষা হল না। বাধা হয়ে দাঁড়াল শারীরিক অসুস্থতা।

হালকা জ্বর, শরীর খারাপ ছিলই। তা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভোটের দামামা বাজাতে বারাণসীতে ‘রোড শো’ করতে গিয়েছিলেন সনিয়া। পরিকল্পনা ছিল, মোদীর লোকসভা কেন্দ্রে গিয়েই তাঁর অচ্ছে দিনের ‘মিথ্যে প্রতিশ্রুতি’-র প্রচার হবে। একই সঙ্গে ব্রাহ্মণ ও দলিত ভোট কংগ্রেসের ঝুলিতে টেনে আনতে ঠিক হয়েছিল, রোড শো শুরু হবে অম্বেডকর মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে। শেষ হবে কংগ্রেসের প্রয়াত ব্রাহ্মণ নেতা কমলাপতি ত্রিপাঠীর মূর্তিতে।

কিন্তু পাঁচ ঘণ্টারও বেশি রোড শোয়ের শেষের দিকে জ্বর এতটাই বাড়তে থাকে যে, তা বন্ধ করে দিতে হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে দিল্লি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন সনিয়া। কিন্তু সারা দিনের ধকলে শরীর এতটাই খারাপ হয় যে বারাণসী বিমানবন্দরেই তাঁকে স্যালাইন দিতে হয়। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রমা সেন্টারকেও বার্তা পাঠানো হয়। রাতে সনিয়াকে নিয়ে বিমান রওনা দেয় দিল্লির উদ্দেশে। সঙ্গে আসেন বারাণসীর চিফ মেডিক্যাল অফিসার। মাকে নিতে দিল্লি বিমানবন্দরে ছোটেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। প্রায় মাঝরাতে বিমানটি পৌঁছলে সনিয়াকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা তাঁকে পরীক্ষা করে জানান, এখন তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।

বিমানবন্দরে অপেক্ষা করার সময়েই প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরেই মায়ের শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। কিন্তু বারাণসীতে যেতে খুবই আগ্রহী ছিলেন। আমার মনে হয়, এটা ওঁর পক্ষে খুবই ধকলের হয়ে গিয়েছে।’’ গুলাম নবি আজাদ পরে বলেন, ‘‘শরীরে জল কমে গিয়েছিল (ডিহাইড্রেশন)। সে কারণেই জ্বর এসেছিল। তবে হাসপাতালে এখন তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।’’

ঠিক ছিল, রোড শোয়ের শেষে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো দেবেন সনিয়া। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর বলেছিলেন, পবিত্র শ্রাবণ মাসে সনিয়া দলের জন্য বাবা বিশ্বনাথের আশীর্বাদ নেবেন। শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, মাত্র পাঁচশো মিটার বাকি থাকতে রোড শো শেষ করতে হয়। তবে সনিয়া পরে এক বার্তায় রোড শো মাঝপথে বন্ধ করে চলে আসার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে জানান, বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য আবার তিনি বারাণসীতে ফিরে আসবেন।

সনিয়ার অসুস্থতার খবর পেয়ে মোদী এ দিন টুইট করেন। লেখেন, ‘শুনলাম আজ বারাণসীতে গিয়ে সনিয়াজি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর দ্রুত আরোগ্য ও সুস্বাস্থ্যের কামনা করি।’’ পাল্টা টুইটে মোদীকে ‘ধন্যবাদ’ জানায় কংগ্রেসও।

শেষ করা না গেলেও কংগ্রেস ও অন্যান্য দলের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন, সনিয়ার রোড শোয়ে আশাতীত সাড়া মিলেছে। প্রথমে কয়েক হাজার বাইকে চেপে কংগ্রেসের কর্মীরা সনিয়াকে বারাণসীর সার্কিট হাউসে নিয়ে আসেন। তার পর রোড শো শুরু হয়। তার পর অম্বেডকর চৌরাহা, গোলঘর, বরুণা পুল, নাদেসার, পিলি কোঠি, বিশ্বেশ্বরগঞ্জ হয়ে সনিয়ার কনভয় যত এগিয়েছে, ততই ভিড় বেড়েছে। খোদ মোদীর গড়ে সাধারণ মানুষ যে ভাবে রাস্তায় নেমেছেন, সনিয়াকে দেখতে, তাঁর সঙ্গে এক বার হাত মেলাতে মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ দেখা গিয়েছে, তা দেখে কংগ্রেস নেতারাও অবাক।

প্রশ্ন হল, এই সাড়া কি কংগ্রেসের ভোটে রূপান্তরিত হবে?

গত ২৭ বছর কংগ্রেস এ রাজ্যে ক্ষমতার বাইরে। বারাণসী তথা পূর্ব উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের যে বিরাট প্রভাব রয়েছে, তা-ও নয়। কংগ্রেসের অনেক নেতাই এত দিন ঘরোয়া আলোচনায় বলেছেন, তাঁদের লড়াই আসলে বিজেপির সঙ্গে, তৃতীয় স্থানের জন্য। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে মায়াবতীর দল ও সমাজবাদী পার্টিই থাকবে। আজকের সনিয়া-ম্যাজিকের পর রাজ বব্বর আশা করছেন, অভাবিত কিছু ঘটতেই পারে। তাঁর যুক্তি, ‘‘উত্তরপ্রদেশের মানুষ বারবার অবাক করেছেন। ২০১৪-য় উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সাফল্যও অভাবিত ছিল। এ বার কংগ্রেসের জন্য তা ঘটতে পারে। তবে এটা স্পষ্ট, আমরা মানুষের মধ্যেই রয়েছি।’’

এ দিন সকালে রাহুল গাঁধী টুইট করে বলেছিলেন, ‘‘সনিয়াজি আজ বারাণসীতে। সেই বারাণসী, যা মোদীজির ফাঁপা প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের মধ্যে ফারাকের প্রতীক হয়ে উঠেছে।’’ প্রশান্ত কিশোরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই রোড শো-র মূল থিম হয়েছিল ‘দর্দ-এ-বেনারস’। কংগ্রেসের দাবি, মোদীর ঝুটো প্রতিশ্রুতিতে বিরক্ত এবং উন্নয়নের বহর দেখে হতাশ মানুষেরাই কংগ্রেসের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি কেশবপ্রসাদ মৌর্য্য কটাক্ষ করেছেন, ‘‘সনিয়া রোড শো, রেল শো বা হেলিকপ্টার শো, যা-ই করুন, ভোটে তার কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

Sonia Gandhi ill Varanasi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy