—ফাইল চিত্র।
তিন দশক আগে রাজধানী দিল্লিতে নির্জোট দেশগুলির (ন্যাম) সম্মেলন মঞ্চ। রাজীব গাঁধী তখন প্রধানমন্ত্রী। প্যালেস্তিনীও নেতা ইয়াসের আরাফত থেকে সেখানে উপস্থিত ন্যামভুক্ত বহু নেতাই। রাজীবের নির্দেশে হাজির হয়েছেন তত্কালীন সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে ওঠার আগে কূটনৈতিক সৌজন্য অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁর দলের নেতাদেরও পরিচয় করিয়ে দিলেন রাজীব। তার পর স্ত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তিনি একটু বিশেষ ভাবে মমতার আলাপ করিয়ে দিলেন। রাজনৈতিক সার্কিটে তখন ততটা সড়গড় নন সনিয়া। রাজীব মঞ্চে ওঠার আগে সনিয়াকে দেখিয়ে মমতাকে বলেছিলেন, ‘‘একটু খেয়াল রেখো।’’ নীচের আসনে পাশাপাশি বসেছিলেন সনিয়া-মমতা।
সেই প্রথম আলাপ। তার পর তিন দশক ধরে জাতীয় রাজনীতি এবং রাজ্য রাজনীতির এই দুই প্রধান নেত্রীর সম্পর্ক অনেক ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। গতকাল, অর্থাত্ সোমবার দিল্লিতে এসে ঘরোয়া ভাবে ন্যাম সম্মেলনে সনিয়ার সঙ্গে সেই প্রথম দেখা হওয়ার স্মৃতিচারণা করলেন তৃণমূলনেত্রী। মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নিয়ে ১০ জনপথে গিয়েছিলেন তিনি।
আরও খবর
র্যানসমওয়্যার হামলাকারীরা পণ হিসেবে চাইছে বিটকয়েন, এটি কী?
এই ১০ জনপথ তাঁর কাছে নতুন কোনও ঠিকানা নয়। এর আগে বহু বার ওই বাংলোয় গিয়েছেন তিনি। যখন যে কারণে এসেছেন, সনিয়ার জন্য উপহার হিসাবে নিয়ে এসেছেন বাংলার তাঁতের শাড়ি। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১০ জনপথ সূত্রে খবর, সনিয়া গাঁধীর মহার্ঘ শাড়ি-শালায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া বাংলার বহু তাঁতের শাড়ি সযত্নে রাখা রয়েছে। ওই একই জায়গায় ইন্দিরা গাঁধীর শাড়িও রাখা আছে। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে পাঁচ বছর আগে ঠিক এ ভাবেই সনিয়ার বাড়ি এসেছিলেন মমতা। এই একই উপলক্ষ নিয়ে। কিন্তু, ঐকমত্য হওয়া। সে বারে পকেটে করে কিছু নাম নিয়ে এসেছিলেন। আর এ বার? রাজনৈতিক ভাবে আরও কিছুটা পোড় খাওয়া মমতা দিল্লি বিমানবন্দরে নেমে বলেছেন, ‘‘শাড়ির কোনও পকেট থাকে না। তাই পকেটে কোনও নামও নেই। আমি আগে দেখি বিরোধী দলগুলি কী ভাবছে? সেই অনুযায়ী পরামর্শ দেব।’’
মাস দুয়েক আগেই শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফর উপলক্ষে রাজধানী এসেছিলেন মমতা। কিন্তু, সংসদে গেলেও সে বার সনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ হয়ে ওঠেনি। তবে রাজনৈতিক মতবিরোধিতা থাকলেও সনিয়ার নাম করে কখনও কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি তিনি। রাহুল গাঁধীকে এক-দু’বার নিশানা করেছেন। ‘বসন্তের কোকিল’ও বলেছিলেন এক বার। উল্টো দিকে, সনিয়া গত বছরের এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গে এসে বলেছিলেন, ‘‘মমতা-মোদী একই মুদ্রার দু’পিঠ। দুই অহঙ্কারী শক্তি বাংলার পক্ষে বিপজ্জনক।’’ তবে সেটা জনসভায় নির্বাচনী বক্তৃতা। এই দুই নেত্রীর দীর্ঘ দিনের রসায়নকে সে ভাবে তা টাল খাওয়াতে পারেনি কখনও।
আরও খবর
দস্যু হানায় সতর্কতা, সফটওয়্যার আপগ্রেড করতে এটিএম বন্ধ
কলকাতায় এআইসিসি সম্মেলনে সোমেন মিত্র এবং সীতারাম কেশরী গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধিতা করে মমতা যখন দল ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন, তাঁকে দলে রেখে দিতে শেষ মুহূর্তে নিজে আসরে নেমেছিলেন সনিয়া। এক দিন রাতে পশ্চিমবঙ্গের তত্কালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অস্কার ফার্নান্ডেজ, অজিত পাঁজা এবং মমতাকে ডেকে পাঠান তিনি। তবে, রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় নাইটগাউন পরে নিয়েছিলেন সনিয়া। সে জন্য তিনি সে যাত্রায় শুধুমাত্র মমতার সঙ্গে দেখা করেন। ভেতরের ঘরে ডেকে নিয়ে মমতাকে বুঝিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখনই ছেড়ো না। তোমাকে রাখা যায় যাতে, আমি সেই চেষ্টাই করছি।’’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
আজও সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে যখন দেখা করলেন মমতা, তখন রাজ্যে দুই দলই (কংগ্রেস ও তৃণমূল) পরস্পর যুযুধান। কিন্তু, রাষ্টপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি বিরোধী জোট তৈরি করার প্রশ্নে এই দুই পুরনো নেত্রীর রসায়ন কিন্তু আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy