E-Paper

‘রুখতে হবে ভুয়ো তথ্যের আতঙ্ক’, জোর দিলেন সৌম্যা

২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, গোটা অতিমারি-পর্বে হু-র প্রধান বিজ্ঞানী পদে নিযুক্ত ছিলেন সৌম্যা। কাজ করেছেন সরাসরি হু-র ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়াসেসের সঙ্গে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৭
Soumya Swaminathan

গোটা অতিমারি-পর্বে হু-র প্রধান বিজ্ঞানী পদে নিযুক্ত ছিলেন সৌম্যা। ফাইল চিত্র।

প্যানডেমিক বা অতিমারির পাশাপাশি গোটা বিশ্ব সাক্ষী হয়েছে আর এক জটিল অসুখের— ‘ইনফোডেমিক’। গত তিন বছরে কোভিড ভাইরাসের থেকেও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে ভুয়ো তথ্য। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। সাম্প্রতিক কালে ‘ইনফোডেমিক’ রুখতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ‘হোমি ভাবা সেন্টার ফর সায়েন্স এডুকেশন’ আয়োজিত একটি আলোচনাসভায় আজ ফের ভুয়ো তথ্যের আতঙ্ক শোনা গেল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৌম্যা স্বামীনাথনের মুখে।

২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, গোটা অতিমারি-পর্বে হু-র প্রধান বিজ্ঞানী পদে নিযুক্ত ছিলেন সৌম্যা। কাজ করেছেন সরাসরি হু-র ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়াসেসের সঙ্গে। ‘ইনফোডেমিক’-এর কথা প্রথম উল্লেখযোগ্য ভাবে শোনা গিয়েছিল গেব্রিয়াসেসের মুখেই। ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রথম এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে সৌম্যা বলেন, ‘‘পশ্চিম আফ্রিকার এক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আমার। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তাঁর দেশে মানুষ খবরের জন্য ভরসা করে হোয়াটসঅ্যাপের উপর! তারা অন্য কোনও কিছুকে বিশ্বাস করে না। এ ভাবে যদি বিশ্বের যে কোনও খবর শোনা হয়, তা হলে ভুয়ো তথ্য ছড়াবেই।’’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘ইনফোডেমিক’ হল, কোনও মহামারি চলাকালীন জনমানসে অতিরিক্ত তথ্য ছড়িয়ে পড়া। যার মধ্যে রয়েছে ভুয়ো তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক খবর। এতে মানুষের মনে ধন্দ তৈরি হয়। তাঁরা বিপজ্জনক আচরণ করেন। প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়। কোভিড অতিমারিতে দেখা গিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, নিউ জ়িল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ সংক্রমণ রোধে ব্যাপক কড়াকড়ি করেছে। মানুষ সরকারের কথা শুনে চলেছে। এ সব দেশে বাড়াবাড়িও খুব কম হয়েছে। যেমন, দীর্ঘদিন করোনা-শূন্য ছিল নিউ জ়িল্যান্ড। আবার ইউরোপে এর উল্টো ছবি দেখা গিয়েছিল। রীতিমতো ভ্যাকসিন-বিরোধী আন্দোলনে চলেছে এই মহাদেশে। এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা কোভিডের একটি টিকাও নেননি। সৌম্যা কোনও দেশের নাম না-করে বলেছেন, ‘‘এমনও দেশ ছিল, যাদের হাতে প্রতিষেধক ছিল, কিন্তু বাসিন্দারা টিকা নেয়নি।’’ সৌম্যার কথায়, ‘‘এটাই প্রথম ও শেষ অতিমারি নয়। এর পরেও নতুন অতিমারি কিংবা মহামারি আসবে। সে ক্ষেত্রে প্রস্তুত থাকতে হবে রাষ্ট্রগুলিকে।’’

এ বারে যে ভাবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে, তা যুগান্তকারী। ভবিষ্যতের জন্য সেটা এক রকম শিক্ষা হয়ে থাকবে। কিন্তু নতুন কোনও অতিমারি দেখা দিলে, যত তাড়াতাড়িই প্রতিষেধক তৈরি করা হোক না কেন, তার আগে কিছু মৃত্যু হবে। তাই বিপর্যয় রুখতে সার্বিক ভাবে জনস্বাস্থ্যের উপরে জোর দিয়েছেন সৌম্যা। তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের আনুষঙ্গিক অসুস্থতা ছিল, যেমন যাঁদের হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা কিংবা ডায়াবিটিস ছিল, তাঁদের জন্য বেশি ঝুঁকির ছিল অতিমারি। যে দেশে এমন রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল, সে দেশে মৃত্যুহার বেশি ছিল। ফলে দেশগুলির উচিত সার্বিক ভাবে জনস্বাস্থ্যের উপরে জোর দেওয়া। মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও জোর দিয়েছেন সৌম্যা।

অতিমারি শুরুর পরে প্রায় একটা বছর লেগে গিয়েছিল প্রতিষেধক তৈরিতে। কিন্তু কোভিড টিকা বাজারে এলেও তা চলে যায় ধনী দেশগুলিতে। দরিদ্র দেশগুলির বাসিন্দাদের টিকা পেতে অনেক দেরি হয়েছিল। এ সময়ে প্রতিষেধক বিতরণে অসাম্য নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। সৌম্যার বক্তব্য, যে সব দেশ টিকা তৈরি করেছে, তারা আগে প্রতিষেধক পেয়েছে। আর যাদের হাতে যথেষ্ট অর্থ আছে, তারা সেই প্রতিষেধক কিনতে পেরেছে। এখন কোনও দেশের সরকার যদি টিকা তৈরিতে বিনিয়োগ করে, সে দেশের মানুষ আগে টিকা পাবে, এটা বাস্তব। তবে বিজ্ঞানের হাত ধরে সমাধান এলে, ‘সংহতির’ কথাও মাথায় রাখা উচিত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Soumya Swaminathan WHO

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy