বিহারে লালু প্রসাদের জমানার ‘জঙ্গলরাজ’ ও দুর্নীতির ‘কালো ছায়া’ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করলেন তাঁর পুত্র তেজস্বী যাদব। তিনি ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী হলে যে অপরাধী ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না, সেই দাবি করে আজ তেজস্বী ঘোষণা করলেন, “তেজস্বী যাদবের ছায়াও যদি ভুল কাজ করে, তাকেও তেজস্বী শাস্তি দেবে।”
বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিহারে বিরোধীদের মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তেজস্বীর নাম ঘোষণা নিয়ে কংগ্রেসের একাংশের আপত্তি ছিল। কারণ ছিল, তেজস্বীকে জোটের মুখ করা হলেই বিজেপি লালু-জমানার দুর্নীতি ও আইন-শৃঙ্খলার অরাজকতা বা ‘জঙ্গলরাজ’-কে হাতিয়ার করবে। সম্প্রতি লালু রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জমির বদলে সরকারি বরাত দেওয়ার অভিযোগে লালু, রাবড়ী ও তেজস্বীর বিরুদ্ধে দিল্লির আদালতে চার্জগঠন হয়েছে।
কংগ্রেসের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। মহাগঠবন্ধনের সাংবাদিক সম্মেলনে তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণার পরেই বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি থেকে জমির বদলে বরাত কেলেঙ্কারি নিয়ে লালু ও তেজস্বী-সহ গোটা যাদব পরিবারকে নিশানা করেছেন। রবিশঙ্কর বলেন, লালু পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত। জমি কেলেঙ্কারিতে তেজস্বী নিজে প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত, যাতে সাত বছর পর্যন্ত জেল হয়। বিহারের মানুষকে ‘সতর্ক’ করে বিজেপির অভিযোগ, তেজস্বী মুখ্যমন্ত্রী হলে বিহারে জঙ্গলরাজ ফিরবে। আরজেডি ঘুষ ছাড়া কাজ করে না।
এই আক্রমণ আগেভাগেই আঁচ করেছিলেন তেজস্বী। মহাগঠবন্ধনের সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেই তাই বলেন, “মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী মুখ কে, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলার পরে বিজেপি এ বার নতুন প্রশ্ন তুলবে। তেজস্বী দুর্নীতির সঙ্গে আপস করবে না। অপরাধীদের বাঁচাবে না। জঙ্গলরাজ পুরোটাই বিজেপির প্রচার। নীতীশের নেতৃত্বে গত ২০ বছরের এনডিএ রাজত্বে ৭০ হাজার খুন হয়েছে। রোজ বিহারে ২০০ রাউন্ড গুলি চলে। ঘুষ না দিল কাজ হয় না। এটা কি জঙ্গলরাজ নয়?” তাঁর দাবি, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হলে তাঁর সরকার ‘পড়াই-দাওয়াই-সিঁচাই-কামাই-সুনবাই’ বা শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি-রোজগার-ন্যায়ের মন্ত্রে চলবে। লালুর জঙ্গলরাজের ছায়া থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলেও বাবার উত্তরাধিকারের দাবিতে আজ তেজস্বী বলেছেন, “লালুর জমানাতেই বিহারে শেষ কারখানা হয়েছিল। এখন অমিত শাহ বলছেন, বিহারে জমির অভাবে কারখানা সম্ভব নয়।”
সূত্রের খবর, নতুন করে দুর্নীতির মামলা সামনে আসায় কংগ্রেসের মধ্যে রাহুল গান্ধীরও তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী ঘোষণা নিয়ে দ্বিধা ছিল। বিজেপি সেই দ্বন্দ্বকে কাজেলাগাতে প্রশ্ন তুলেছে, মহাগঠবন্ধনের সাংবাদিক সম্মেলনে কেন শুধু তেজস্বীর ছবি? রাহুলের ছবি নেই কেন? কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, বিহারে প্রথম দফার ভোটের আগেই রাহুল-তেজস্বীর যৌথ জনসভা হবে। রাহুল অন্তত বার দশেক বিহারে প্রচারে যাবেন। মহাগঠবন্ধনের বিভিন্ন গ্যারান্টিকে সামনে রেখে তিনি প্রচার করবেন। ছটপুজোর পরে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও বিহারে যাবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)