মহিলাদের ভোট চাই। তাই উপহারের কমতি নেই। কিন্তু প্রার্থী তালিকায় মহিলাদের খুঁজতে আতসকাচ লাগে।
বিজেপি, জেডিইউ-র এনডিএ হোক বা বিরোধীদের মহাগঠবন্ধন—বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে দুই শিবিরই মহিলা ভোটারদের মন জিততে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিন্তু দুই শিবিরেই প্রার্থী তালিকায় মহিলাদের শতকরা হার ১৫ ভাগেরও কম। বিহারের ৭ কোটি ৪৩ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ৩ কোটি ৯২ লক্ষের মতো পুরুষ ভোটার। মহিলা ভোটারের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে এতখানি ফারাকের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সামাজিক কারণে অনেক সময়ে মেয়েদের নাম ভোটার তালিকায় তোলা হয় না। আবার বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের নতুন পুত্রবধূর নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিয়ে অনীহা থাকে। অথচ বিহারের মহিলারা ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের পিছনে ফেলে দিয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষদের ভোটদানের হারের থেকে মহিলাদের ভোটদানের হার প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। বস্তুত ১৯৬২ সালের পর থেকেই বিহারে মহিলাদের ভোটদানের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।
এই মহিলা ভোটারদের মন জিততে এ বার বিহারের ভোট ময়দানে নীতীশ কুমার বনাম তেজস্বী যাদবের জোর প্রতিযোগিতা। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিহারে মদ পুরোপুরি বন্ধ করে মহিলা ভোটারদের মন জয় করেছিলেন। কারণ মদ বন্ধ হওয়ায় বাড়িতে মদ্যপ স্বামীর হাতে মহিলাদের নির্যাতনও কমেছিল। তার পরে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, ছাত্রীদের সাইকেল বিলির মতো প্রকল্পও তাঁকে মহিলাদের ভোট ঝুলিতে পুরে ২০ বছর মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। তাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে তেজস্বী ঘোষণা করেছিলেন, মহাগঠবন্ধন সরকার ক্ষমতায় এলে মাই-বহন মান যোজনায় মহিলাদের প্রতি মাসে ২,৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। বিধবা, বৃদ্ধাদের পেনশন, ছাত্রীদের পেনশন সংক্রান্ত ঘোষণাও করেন। তার পরেই নীতীশ মহিলা রোজগার যোজনা চালু করে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে পাঠাতে শুরু করেন। তেজস্বী একে ‘ভোট পেতে ঘুষ’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা ঘোষণা করেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হলে মহিলাদের স্বনির্ভর প্রকল্পে যুক্ত জীবিকা দিদি-দের চাকরি স্থায়ী করে মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে।
নীতীশ বনাম তেজস্বীর মহিলা ভোট পাওয়ার প্রতিযোগিতা চললেও প্রার্থী তালিকায় তার প্রতিফলন নেই। বিজেপি, জেডিইউ-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র ২৪৩ আসনের মধ্যে মাত্র ৩৫ জন মহিলাকে প্রার্থী করেছে। এনডিএ-র প্রার্থী তালিকায় মহিলাদের সংখ্যা মাত্র ১৪.৪০ শতাংশ। কেন্দ্রে এনডিএ সরকার মহিলা সংরক্ষণ আইন করে ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের পদক্ষেপ করলেও বিহারের প্রার্থী তালিকায় বিজেপি তা কার্যকর করেনি। বিজেপির ১০১ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৩ জন মহিলা। জেডিইউ-র ১০১ জন প্রার্থীর মধ্যেও মহিলার সংখ্যা ১৩ জন। বিরোধীদের মহাগঠবন্ধনেরও একই দশা। বিরোধী জোট ২৪৩ আসনে মাত্র ১৩.১৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ৩২ জন মহিলাকে প্রার্থী করেছে।আরজেডি-র ১৪৩ জনের প্রার্থী তালিকায় মাত্র ২৪ জন মহিলা। কংগ্রেসের ৬০ জনের তালিকায় মহিলার সংখ্যা ৫ জন। সিপিআই-এমএল লিবারেশনে ২০ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র এক জন মহিলা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত তিনটি বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ভোট বেশি পড়ার ফায়দা নীতীশ কুমার পেয়েছেন। পাঁচ বছর আগে ২০২০-র বিধানসভা নির্বাচনে যে সব আসনে মহিলাদের ভোট বেশি পড়েছিল, তার প্রায় ৬০ শতাংশ আসন জেডিইউ-বিজেপি দখল করেছিল। অন্য দিকে যে সব আসনে মহিলাদের ভোট কম পড়েছে সেখানে আরজেডি ভাল ফল করেছিল। বিহার কংগ্রেসের এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘মহিলারা অনেক সময়ই জাতপাতের সমীকরণের ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে ভোট দেন। তাঁদের কাছে মদ বন্ধ করা, আর্থিক অনুদান, ছাত্রীদের বৃত্তি, সাইকেলের মতো সুবিধে বেশি গুরুত্ব পায়। সেই কারণেই নীতীশ এত দিন এগিয়ে থেকেছেন। তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে মহাগঠবন্ধন ২৮ অক্টোবর যে ইস্তাহার ঘোষণা করতে চলেছে, তাতে মহিলাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা থাকবে। সে দিনই প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা বিহারে প্রচারে যাবেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)