সেপ্টেম্বরের গোড়ায় চিন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এসসিও গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলির শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে সে দেশে যাওয়া চূড়ান্ত হলে তার কিছু আগে, অর্থাৎ অগস্টের শেষে, তাঁর জাপান সফরের কথাও ভাবা হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রে এ খবর পাওয়া গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী চিন সফরে গেলে, তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ ২০১৯ সালের পরে তিনি ওই দেশে পা রাখেননি। ’২০ সালে গলওয়ান সংঘাতের পরে ক্রমশ অধোগতি হয়েছে নয়াদিল্লি-বেজিং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের। গত কয়েক মাসে তার থেকে বেরিয়ে সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে দু’দেশের পক্ষ থেকেই। যদিও রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেসের অভিযোগ, অপারেশন সিঁদুর-এর পরে চিন তাদের অস্ত্রচালনার পরীক্ষাগার হিসেবে ভারতকে নিশানা করেছিল। পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়েছিল। অভিযোগ, এই নিয়ে জোর গলায় ভারতের প্রতিবাদের কোনও ক্ষমতা নেই। কগ্রেসের বক্তব্য, চিনকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত মোদীর সঙ্গে শি-র শেষ বৈঠকের পরে, অপারেশন সিঁদুরের সময়ে, চিন পুরোদস্তুর পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে।
প্রসঙ্গত এসসিও সম্মেলনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়। অনেক চেষ্টা করেও রাজনাথ সিংহ যৌথ বিবৃতিতে পহেলগাম কাণ্ডের কথা রাখতে পারেননি। তবে বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে জয়শঙ্কর এবং চিনা শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকে সম্পর্কের ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ দেখা গিয়েছে বলেই দাবি বিদেশ মন্ত্রকের।
তবে চিনের আগে মোদীর জাপান যাওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, জাপান সম্প্রতি একটি চিন-বিরোধী শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, চিনের সামরিক বাহিনী জাপানের আশপাশের এলাকায় তাদের সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ ঘিরে থাকা পূর্ব চিন সাগর, জাপান সাগর এবং পশ্চিম প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল।
সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান থেকে ভারত এবং চিনের সেনা অনেকটা সরে এলেও দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের কালো মেঘ কাটেনি বলেই মনে করছেন ভূ-রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। অপারেশন সিঁদুর-এর সময়ে সরাসরি পাকিস্তানকে সাহায্য করার অভিযোগ ছাড়াও তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের গুরু দলাই লামার উত্তরাধিকার নিয়ে চিন যে ভাবে প্রায় প্রতিদিনই হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, তাতে নয়াদিল্লি-বেজিং সম্পর্কের ফের অবনতি হতে পারে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে সার্কের বিকল্প অক্ষ গড়তে উদ্যোগী চিন। এইঅবস্থায় নিজেদের ভূকৌশলগতগুরুত্ব বাড়াতে জাপানের সঙ্গেঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চায় নয়াদিল্লি, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ফলে চিন এবং জাপানকে একই বন্ধনীর মধ্যে রেখে বেজিংকে কূটনৈতিক বার্তা দেওয়াটাই লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)