নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে ভারতীয় নেতৃত্বের বক্তৃতার আর তিন সপ্তাহও বাকি নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে আমেরিকা সফরে যাবেন কিনা, তা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। মোদী গেলে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক অবশ্যম্ভাবী। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্রমাগত ভারতকে খাটো করার ভাষ্যের পরিপ্রেক্ষিতে মোদী ট্রাম্পের করমর্দনের ছবি ঘরোয়া রাজনীতিতে ভুল বার্তা দিতে পারে। অন্য দিকে কূটনৈতিক কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, মুখোমুখি আলোচনায় কিছুটা সুরাহা হয়। সে ক্ষেত্রে বছরের শেষে ভারতে হতে চলা কোয়াড সম্মেলনে ট্রাম্পের আসার সম্ভাবনা বাড়ে।
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, "ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে সামগ্রিক আন্তর্জাতিক কৌশলগত অংশিদারিত্ব রয়েছে এবং পারস্পরিক স্বার্থ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জড়িয়ে রয়েছে, এমন বিষয়গুলিকে আমরা আগে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আলাস্কায় ভারত-আমেরিকা সেনা মহড়া শুরু হয়েছে। গত মাসে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠক হল। আমেরিকার প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত নীতি নির্ধারক একটি প্রতিনিধি দল সদ্য ভারত ঘুরে গেল।"
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ভারতের উপর জারি হওয়া ৫০ শতাংশ শুল্কের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনলেও দেশের বাকি মানুষদের ঠকিয়ে এত দিন ব্রাহ্মণরাই লাভ করছিলেন। আজ জয়সওয়াল এই মন্তব্যের নিন্দা করে বলেছেন, "অত্যন্ত বিভ্রান্তকর এবং মিথ্যা এই বক্তব্য। আমরা এই মতামত প্রত্যাখ্যান করছি।" আমেরিকা এইচ-১বি ভিসার নিয়মে রদবদল আনতে চলেছে বলে জানিয়েছে। কড়াকড়ি বাড়তে চলেছে গ্রিন কার্ডেও। আমেরিকার বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের কথায় এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। উদ্বেগ বেড়েছে আমেরিকায় বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ বিদেশি কর্মী ও পড়ুয়াদের। আজ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। তাঁর কথায়, "ভারত এবং আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি বড় স্তম্ভ হল, দু'দেশের মানুষের পারস্পরিক যাতায়াত। এর ফলে দু'দেশেরই উপকার। এর ফলে প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক অংশিদারিত্ব বাড়ে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলছি।"
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এ ভাবে নিরন্তর দরকষাকষির মাধ্যমে আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখাটাই এই কঠিন ভূকৌশলগত সময়ে ভারতের অগ্রাধিকার। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কে ধস নেবে যাক, এমনটা আদৌ চাইছে না সাউথ ব্লক। ভারত এমনটাও ধরে নিচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহ আরও কঠিন হতে পারে। শুল্কের চাপের পরে দু'দেশের প্রতিরক্ষা বা কৌশলগত সম্পর্কে তার ছায়া পড়তে পারে। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা নানা কারণে অসম্ভব নয়াদিল্লির পক্ষে। কূটনৈতিক কর্তাদের বক্তব্য, আমেরিকা ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী এবং এখনও পর্যন্ত আমেরিকায় ভারতের রফতানি সর্বোচ্চ। ভারত-চিন সীমান্তে গোয়েন্দা সহযোগিতা, চিনা অনুপ্রবেশ রোধে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক বণ্টন ব্যবস্থায় চিনের প্রভাব ছাঁটতে প্রযুক্তিগত অংশিদারিত্বের জন্য আমেরিকাকে সব সময়ই প্রয়োজন ভারতের। সাউথ ব্লক এ কথাও ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করছে যে, ভারত-চিন সম্পর্ক কোনও ভাবেই ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের পরিপূরক নয়। ভারত-চিন সম্পর্কে পারস্পরিক সন্দেহ রয়েছে, সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)