গত কালই জনগণনার সঙ্গে জাতগণনা করার ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। তার পরেই আগামী ৪ মে বিহার সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বভাবতই জাতগণনার বিষয়টি তাঁর সরকারের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। অন্য দিকে কংগ্রেস আজ ফের সরব হয়েছে যে, রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের চাপের কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছেন মোদী এবং তাঁর দল।
গত কাল জনগণনার সঙ্গে জাতগণনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মোদী সরকার। যে দাবি দীর্ঘ সময় ধরেই করে আসছিল কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীরা। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, বিহার ভোটের ছয় মাস আগে ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বিরোধীদের ভবিষ্যতে আন্দোলন বা রাজনৈতিক প্রচারের রাস্তা বন্ধ করে দিলেন মোদী। সরকারের সিদ্ধান্তে স্বস্তিতে বিহারের শাসক দল জেডিইউ-সহ অন্য শরিকেরাও। মূলত জাতগণনার যে দাবি উঠেছিল, তাতে বিজেপির সঙ্গে নীতিগত পার্থক্য তৈরি হয়েছিল জেডিইউ, এলজেপি বা জিতনরাম মাঝির আপনা দলের।
এলজেপি নেতা চিরাগ পাসোয়ান বলেন, জাতগণনা প্রসঙ্গে তিনি সরব থাকায় প্রায়শই সরকারে অভ্যন্তরে কোণঠাসা হতেন। তাঁর কথায়, “জাতগণনা সময়ের দাবি ছিল। সরকার তা মেনে নিয়েছে।” ঘরোয়া ভাবে ওই এলজেপি নেতা স্বীকার করে নিয়েছেন, জাতগণনা কেন হল না, তা নিয়ে আগামী দিনে ভোটের প্রচারে নামার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু এখন বিরোধীদের বেলুন চুপসে গিয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি। অন্য দিকে, নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ ওই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপির হাত ধরার আগে নীতীশের সরকার বিহারে জাতগণনা সেরে ফেলেছিল। সেই মতো বিহারে ৬৫ শতাংশ সংরক্ষণ নীতিও তিনি চালু করেছিলেন। যদিও তাতে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এ যাবৎ বিজেপি জাতগণনার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় স্বভাবতই জেডিইউয়ের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব ছিল আরজেডি-কংগ্রেস। গত কালের ঘোষণার পরে জেডিইউয়ের কার্যনির্বাহী সভাপতি সঞ্জয় ঝা বলেন, “নীতীশ কুমার দীর্ঘদিন ধরেই জাতগণনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সরকার তা শেষ পর্যন্ত মেনে নেওয়ায় একে নীতীশ কুমারের জয় হিসেবেই দেখছে দল। এর ফলে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির লোকেদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য যেমন পাওয়া যাবে, তেমনই তাঁদের উন্নতিতে বিভিন্ন ধরনের নীতি হাতে নেওয়া সম্ভব হবে।” সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আর এক শরিক নেতা জিতনরাম মাঝিও।
যে ভাবে বিজেপি নিজের অবস্থান থেকে পিছিয়ে জাতগণনা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে, তা আসলে রাহুল গান্ধীর জয় বলেই দাবি করেছেন পূর্ণিয়ার নির্দল সাংসদ পাপ্পু যাদব। তিনি আজ সমাজমাধ্যমে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনার অন্ধ সমর্থকেরা এত দিন জাতগণনার বিপক্ষে সরব ছিলেন। আর এখন বাধ্য হয়ে তার পক্ষেই মুখ খুলতে হচ্ছে তাঁদের! আপনি তো সমর্থকদের বিদূষক বানিয়ে দিয়েছেন!’ আরজেডি নেতা তেজস্বী প্রসাদ যাদবের মতে, “এই জয় আমাদের দলের, বিশেষ করে লালু প্রসাদ যাদবের। আমরা সংসদ থেকে সড়ক— সর্বত্র জাতগণনার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলাম।” কবে ওই জাতগণনার সুফল পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন লালু-পুত্র। তাঁর কথায়, “ইতিমধ্যেই চার বছর দেরি হয়ে গিয়েছে। আশা করব লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের আগেই জাতগণনার কাজ সারা হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)