হরিয়ানার পরে বিহারেও কি জেতার সম্ভাবনাময় ম্যাচে কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া মঞ্চ হারতে চলেছে!
বিহারে বিরোধীদের জোটে আসন বণ্টন ঘিরে বিবাদের জেরে কংগ্রেস নেতারা এখন বলছেন, ‘‘প্রায় জিতে ফেলা নির্বাচন আমরা আবার হারতে চলেছি।’’ এর জন্য কংগ্রেস নেতৃত্ব যেমন আরজেডি নেতৃত্বকে দোষারোপ করছেন, তেমনই কংগ্রেসের অন্দরে নিজেদের নেতাদের দিকে আঙুল উঠছে। কংগ্রেসের একাধিক নেতা মনে করছেন, দলের কিছু নেতা বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে খাটো করতে আরজেডি-র সঙ্গে কংগ্রেসের বোঝাপড়ায় সমস্যা তৈরি করছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের এই প্রাক্তন পদাধিকারীরা শুধুমাত্র নিজেদের ছেলেদের প্রার্থী করতে ও জেতাতে ব্যস্ত। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, হরিয়ানাতেও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল অসন্তোষ থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস নেতারা নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও যে যাঁর নিজের ছেলেমেয়েদের জেতাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় কংগ্রেস হেরে যায়। বিহারেও দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের দলিত, ওবিসি, সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশ জেডিইউ-বিজেপির এনডিএ-কে হারাতে চায়। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আরজেডি, কংগ্রেস জিততে চায় না।
ইন্ডিয়া মঞ্চের শরিক নেতাদের বক্তব্য, রাহুল গান্ধী-তেজস্বী যাদবের ভোটার অধিকার যাত্রার পরে যে আবহ তৈরি হয়েছিল, রাহুল গান্ধী তার পরে আচমকা দক্ষিণ আমেরিকা সফরে চলে যান। আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনাতেও জট তৈরি হয়। দু’সপ্তাহে বিরোধীদের পক্ষে তৈরি সেই হাওয়া মুছে গিয়েছে। রাহুল ফেরার পরেও বিহার সফরে যাননি। তেজস্বীর সঙ্গেও বৈঠক করেননি।
বিহারে ৬ নভেম্বরের প্রথম দফার ভোটের মনোনয়ন শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনও আরজেডি, কংগ্রেস কে কত আসনে লড়বে ঘোষণা করতে পারেনি। যে যার নিজেদের মনোনয়ন জমা দিয়েছে। কংগ্রেস আজ আরও পাঁচটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সব মিলিয়ে কংগ্রেস ৫৪টি আসনে প্রার্থী দিল। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে প্রথম দফার ১২১টি আসনে ১২৫ জন বিরোধী জোটের প্রার্থী। ১০টি আসনে দুই বিরোধী দল একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে। পাঁচটি আসনে কংগ্রেস, আরজেডি দুই দলই প্রার্থী দিয়েছে। ফলে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হবে কি না, তা মনোনয়ন প্রত্যাহারের উপরে নির্ভর করছে।
আজ বিরোধী জোটের ছোট শরিক ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জানিয়ে দিয়েছে, তারা ৬টি আসনে একাই লড়বে। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের বক্তব্য, তাঁরা আরজেডি-র কাছে দরবার করেছিলেন। তাঁদের মাধ্যমে কংগ্রস হাইকমান্ডকে বলা হয়েছিল। ঝাড়খণ্ডে মোর্চা আরজেডি-কে আসন দিয়েছে। একমাত্র জেতা প্রার্থীকে পাঁচ বছর মন্ত্রীও করেছে। কিন্তু বিহারে সেই সাড়া না পাওয়ায় মোর্চা নিজেই ছ’টি আসনে লড়বে।
কংগ্রেস শিবিরে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, দলেরই কিছু আরজেডি-ঘনিষ্ঠ নেতার প্ররোচনায় আরজেডি বিহারের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ রামের কুটুম্বা আসন প্রার্থী দিতে পারে। এ ছাড়াও কংগ্রেসের বহু আসনে আরজেডি-র নেতারা ছোট দলের বা নির্দল প্রার্থী হচ্ছেন। কংগ্রেসের মধ্যে দাবি উঠেছে, তা হলে কংগ্রেসও রাঘোপুরে তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিক। রাজেশ যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘দলিতকে দমন করা যাবে না। ইনকিলাব হবে।’’ আরজেডি আজ বিবৃতি দিয়ে এ সব মিথ্যে অভিযোগ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বিহার কংগ্রেস বিবৃতি দিয়ে আরজেডি-কে বার্তা দিয়েছে, নিজের স্বার্থের থেকে গণতন্ত্র ও বিহারের উন্নতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
বিরোধীদের মহাগঠবন্ধনের অন্যতম শরিক সিপিআই-এমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বক্তব্য, জোটের মধ্যে এই ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’-এর কোনও জায়গা নেই। সিপিআই-এমএল লিবারেশন নিজেরা ২০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। যদিও আরও বেশি আসনে লড়তে চাইছিলেন তাঁরা। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তারিক আনোয়ারের বক্তব্য, বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই লড়তে হলে আর জোট করা কেন! প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের অভিযোগ, তেজস্বীর সিদ্ধান্তহীনতার ফলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)