Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

স্টেডিয়াম না পেয়ে কংগ্রেস এগিয়ে আনল নেহরু জয়ন্তীই

বিজেপির আতঙ্কে চূড়ান্ত গোপনীয়তায় মোড়া ছিল গোটা কর্মসূচি। শেষরক্ষা হল না। জওহরলাল নেহরুর জন্মের ১২৫ বর্ষপূর্তি পালন করতে গিয়ে জোর ধাক্কাই খেল কংগ্রেস। অবস্থা এমনই দাঁড়াল যে, নেহরুর দল কংগ্রেসকেই কি না তাঁর জন্মদিন পালন করতে হচ্ছে এক দিন আগে ১৩ নভেম্বর। কারণ, ১৪ নভেম্বরের জন্য দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়াম বুক করতে গিয়ে নেতারা জেনেছেন, ওই দিন স্টেডিয়াম পাওয়া যাবে না। তালকাটোরায় সে দিন কেন্দ্রের নেহরু জয়ন্তী অনুষ্ঠান হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
Share: Save:

বিজেপির আতঙ্কে চূড়ান্ত গোপনীয়তায় মোড়া ছিল গোটা কর্মসূচি। শেষরক্ষা হল না।

জওহরলাল নেহরুর জন্মের ১২৫ বর্ষপূর্তি পালন করতে গিয়ে জোর ধাক্কাই খেল কংগ্রেস। অবস্থা এমনই দাঁড়াল যে, নেহরুর দল কংগ্রেসকেই কি না তাঁর জন্মদিন পালন করতে হচ্ছে এক দিন আগে ১৩ নভেম্বর। কারণ, ১৪ নভেম্বরের জন্য দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়াম বুক করতে গিয়ে নেতারা জেনেছেন, ওই দিন স্টেডিয়াম পাওয়া যাবে না। তালকাটোরায় সে দিন কেন্দ্রের নেহরু জয়ন্তী অনুষ্ঠান হবে।

কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে দেখা হতেই বললেন, “বলেছিলাম বিজেপি ভাঙচি দেওয়ার চেষ্টা করছে। মিলে গেল!”

বিজেপি সেই দাবি ওড়ালেও একটা বিষয় পরিষ্কার। নেহরুর জন্মদিন ঘিরে কার্যত নজিরবিহীন আকচাআকচিতে জড়িয়ে পড়ল কংগ্রেস ও বিজেপি। এতটাই যে, নেহরু-জয়ন্তী উপলক্ষে ১৭ ও ১৮ তারিখের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই আমন্ত্রণ জানাল না কংগ্রেস। এবং সে কথা জোর গলায় জানিয়ে সনিয়া গাঁধীর দলের বক্তব্য নেহরুর সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় ‘যাঁদের’ বিশ্বাস নেই, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো বৃথা। বিজেপির পাল্টা বক্তব্য, নেহরু দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী নন। তাঁকে নিয়ে আয়োজিত কোনও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার। কংগ্রেস যে রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া, তা বোঝাই যাচ্ছে।

নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে দু’দিনের ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রিতের তালিকায় রয়েছেন ১৯টি দেশের প্রতিনিধি। আমন্ত্রণ পেয়েছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি, আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের মতো দল। কংগ্রেস নেতাদের একাংশের বক্তব্য, এই সম্মেলনে প্রথম দিকে যাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তাঁদের অনেকে কথা দিয়েও রহস্যজনক ভাবে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। এখানেই বিজেপি ভাঙচি দিচ্ছিল বলে ঘনিষ্ঠ মহলে অভিযোগ করছিলেন তাঁরা। তাই সম্মেলন নিয়ে গোটা পরিকল্পনাই চূড়ান্ত গোপন রাখা হয়েছিল। এমনকী নেতারা পরস্পরের মধ্যে ফোনেও কথা বলছিলেন না।

যেটুকু খবর সকলের জানা ছিল ১৪ নভেম্বর নেহরুর জন্মদিনে তালকাটোরা স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে চায় কংগ্রেস। সেই সমাবেশে সনিয়া গাঁধী দলকে নেহরুর আদর্শে পুনরায় সমর্পণ করার শপথ নেবেন বলে ঠিক ছিল। লক্ষ্যণীয়, কংগ্রেসের ধাক্কাটা এল ‘গোপন’ কোনও কর্মসূচির উপরে নয়। বরং বহু আগে কার্যত ঘোষিত তালকাটোরা স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানই মোদী সরকারের ঠেলায় এগিয়ে আনতে হল তাদের। এ ব্যাপারে অবশ্য কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে যায়নি কংগ্রেস। নেতাদেরই একাংশ বলছেন, “ঝগড়া করতে গেলে সরকার ফের কী প্যাঁচ কষবে কে জানে!”

আজ নেহরু জয়ন্তী নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, মোদীকে তাঁরা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কি না। জবাবে আনন্দ শর্মা বলেন, “কংগ্রেস এই সম্মেলন আয়োজন করছে। কংগ্রেস মনে করছে, প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া আমরা কি সরকারের অধীনে? কংগ্রেস একটি রাজনৈতিক আন্দোলন।”

প্রশ্ন ওঠে, নেহরু কি কোনও রাজনৈতিক দলের একার? আনন্দের জবাব, “আখেরে কংগ্রেসেরই নেতা ছিলেন পণ্ডিত নেহরু।” পরে কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে চার বাম দল, সপা, বসপা, তৃণমূল ইত্যাদি দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিজেপি ও তাদের শরিক শিবসেনা, অকালি দলকে ডাকা হবে না। এমনকী মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকারকে সমর্থন জানানোয় হয়তো আমন্ত্রণ জানানো হবে না শরদ পওয়ার তথা তাঁর এনসিপি-কেও।

ইদানীং কংগ্রেস নেতাদের অনেকে মনে করছেন, নেহরু-গাঁধী পরিবারের ঐতিহ্যকে লঘু করতে চাইছেন মোদী। তাই বল্লভভাই পটেলকে বারবার তুলে ধরছেন। নেহরুর জন্মদিনে শিশু স্বচ্ছতা অভিযান শুরু করার ঘোষণা করেও মোদী ওই দিন দেশে থাকবেন না।

আজ সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আনন্দ শর্মা বলেন, “নেহরুর ঐতিহ্যকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা যাঁরা করছেন, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে রয়েছেন।” তবে নেহরুর অবদান সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্তব্য ও চিন্তাধারার প্রশংসা করেছে কংগ্রেস।

অনেকের মতে, নিজেরা চাপের মুখে পড়ে বিজেপিকেও কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস। নেহরু-সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে তারা দেখাতে চাইছে, বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ দল নয়। কাজেই তাদের সঙ্গে নেহরুর সমাজতন্ত্রেরও কোনও সম্পর্ক নেই। এই প্রসঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “এটা কী এমন ব্যাপার যে, একটা সম্মেলন করেই কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবে? এটা সৌজন্যের প্রশ্ন। নেহরু জয়ন্তীর সরকারি কমিটিতে কংগ্রেস নেতাদেরও রাখা হয়েছে। তা দেখেও অন্তত শিখতে পারতেন তাঁরা!”

গোপনীয়তার অর্ধ শেষ। খেলা গড়াল তিক্ততায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE