Advertisement
E-Paper

আড়ি পাতার দখল নিয়ে নতুন দ্বন্দ্ব

রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবরটা জেনেছি। সরকারি ভাবে জানানো হলে আমাদের আপত্তির কথা লিখব।’’ সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের আরও একটি ক্ষেত্র শীঘ্রই তৈরি হতে পারে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৪০

ফোনে আড়ি পাতার উপর এ বার যে পুরোদস্তুর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ আসতে চলেছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের সায় নেই।

নয়া ব্যবস্থায় ফোনে আড়ি পাতার রাশ থাকবে টেলি যোগাযোগ মন্ত্রকের হাতে। যেটা তাঁদের অধিকারে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ বলে রাজ্য পুলিশের বহু শীর্ষকর্তা মনে করছেন। তা হলে রাজ্য পুলিশ কার ফোনে কেন আড়ি পাতছে, সেটা কেন্দ্রীয় সরকার তথা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি আগেভাগে জেনে কাজ হাসিল করে কৃতিত্ব নিতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন তাঁরা।

রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবরটা জেনেছি। সরকারি ভাবে জানানো হলে আমাদের আপত্তির কথা লিখব।’’ সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের আরও একটি ক্ষেত্র শীঘ্রই তৈরি হতে পারে।

নতুন এই ব্যবস্থার নাম সেন্ট্রাল মনিটরিং সিস্টেম (সিএমএস)। এটি দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সিদ্ধান্ত। তখন সরকারে শরিক ছিল তৃণমূলও। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, নিরাপত্তার স্বার্থে ও আড়ি পাতার অপব্যবহার রুখতে এটা জরুরি। তখনই কেন আপত্তি করা হয়নি? এক শীর্ষ পুলিশকর্তার বক্তব্য, ব্যাপারটা ঠিক কী হতে চলেছে, সেটা তখন স্পষ্ট ছিল না। নতুন ব্যবস্থা রূপায়ণের দায়িত্বে আছে টেলি যোগাযোগ মন্ত্রকের টার্ম (টেলিকম এনফোর্সমেন্ট, রিসোর্স অ্যান্ড মনিটরিং) সেল। পশ্চিমবঙ্গে এটা তারা সল্টলেক থেকে চালাবে। টার্ম সেল-এর এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘যন্ত্র বসানো ও প্রযুক্তিগত কাজ প্রায় শেষ।’’

সিএমএস চালু হলে কেন্দ্র বা রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থাকে কারও ফোনে আড়ি পাততে চাইলে উপযুক্ত অনুমোদন (রাজ্যের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রসচিব) নিয়ে টেলি যোগাযোগ মন্ত্রকের দ্বারস্থ হতে হবে। এত দিন সেটা টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই কাজ হয়ে যেত়। নতুন ব্যবস্থায় রিজিওনাল মনিটরিং সেন্টার (আরএমসি)-কে তদন্তকারী সংস্থা উপযুক্ত ব্যক্তির অনুমোদন-সহ জানাবে, কার ফোনে কী কারণে আড়ি পাতা দরকার। সার্ভিস প্রোভাইডারও ঝট করে আড়ি পাতার হদিস পাবে না।

পশ্চিমবঙ্গে সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে ন’টি সংস্থা টেলি পরিষেবা দেয়। প্রতিটিতে সার্ভার বসিয়েছে টেলি মন্ত্রক। ওই সার্ভার থেকে তারা ‘ডেটা’ নিয়ে তদন্তকারী সংস্থাকে আড়ি পাতার সুবিধে দেবে। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিষেবাদাতা সংস্থাগুলিকে কার্যত পাশ কাটিয়ে গোটা ব্যবস্থায় কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ থাকছে। নিরাপত্তার কথা বলে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা কাজে লাগানো হতে পারে।’’ যদিও কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী মনোজ সিনহার আশ্বাস, ‘‘পুরনো আইনের ভিত্তিতেই যা হওয়ার হয়েছে। আইনের যাতে অপপ্রয়োগ না হয় তার জন্য মনিটরিং সেল আছে।’’

বর্তমান ব্যবস্থায় আড়ি পাতার সুবিধা তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়ার পর পরিষেবাদানকারী সংস্থা ওই তথ্য টার্ম সেল-কে জানায়। কিন্তু টার্ম সেল এখন ওই সব সংস্থা থেকে সার্ভারের মাধ্যমে ডেটা টানার সুযোগ পায় না। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, ‘‘আরএমসি-কে পাঠানো আমাদের অনুরোধপত্রে বলতে হবে, কেন আড়ি পাততে চাইছি। সেটা দেখে আরএমসি কোনও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে আমাদের আগে তাদের যে আড়ি পাতার সুযোগ দেবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?’’

Phone Tapping State Government Central Government Mobile Phone পশ্চিমবঙ্গ Central Monitoring System CMS Regional Monitoring Centre সিএমএস আরএমসি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy