Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Debt

ঋণের শর্ত মানলে রাজ্যের লাভ, দাবি মন্ত্রকের

কোভিডের মোকাবিলা ও লকডাউনের ধাক্কা কাটাতে গত মে মাসে মোদী সরকার রাজ্যগুলিকে আরও ধার করার ছাড়পত্র দিয়েছিল। কিন্তু চার দফা শর্তও চাপিয়েছিল।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০৪:১৮
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি তুলেছেন, এ বছর রাজ্যগুলিকে বিনা শর্তে বাড়তি ধার করতে দেওয়া হোক। কোভিড মোকাবিলার জন্য মমতা এই দাবি তুললেও কেন্দ্রের অর্থ মন্ত্রক বলছে, যথেচ্ছ ধার করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের মাথায় যাতে ফের ঋণের বোঝা চেপে না বসে, সেই কারণেই শর্ত রাখা হয়েছে।

গত কাল কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির পরে অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তার মন্তব্য, “কেন্দ্রের শর্ত মানলে রাজ্যেরই নিজস্ব আয় বাড়বে। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমবে। সে ক্ষেত্রে বাড়তি ধার করলেও তা মেটাতে অসুবিধা হবে না। পশ্চিমবঙ্গ-কেরলের মতো রাজ্যের মাথায় যথেষ্ট ঋণ ও সুদের বোঝা রয়েছে। এখন কোভিড মোকাবিলায় ফের ধার করতে গিয়ে নতুন করে ঋণের বোঝা চেপে বসবে না।”

কোভিডের মোকাবিলা ও লকডাউনের ধাক্কা কাটাতে গত মে মাসে মোদী সরকার রাজ্যগুলিকে আরও ধার করার ছাড়পত্র দিয়েছিল। কিন্তু চার দফা শর্তও চাপিয়েছিল। রাজ্যগুলিকে বাড়তি ধার করতে হলে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হয়। কেন্দ্র এত দিন রাজ্যগুলিকে নিজের জিডিপি-র ৩% পর্যন্ত ধার করার অনুমতি দিয়ে রেখেছিল। মুখ্যমন্ত্রীদের আর্জি মেনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেন, শুধুমাত্র চলতি অর্থ বছরে রাজ্যগুলি নিজের জিডিপি-র ৩%-র বদলে ৫% ঋণ নিতে পারবে। কিন্তু এই বাড়তি ২%-র মধ্যে ০.৫% ঋণ‌ নেওয়ায় কোনও শর্ত থাকছে না। এক দেশ এক রেশন কার্ড ব্যবস্থা, ব্যবসার সহজ পরিবেশ তৈরি, পুরসভাগুলির আয় বাড়ানো এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কার, এই চারটি কাজ করলে প্রতি ধাপে ০.২৫% করে মোট ১% বাড়তি ঋণের অনুমতি মিলবে। বাকি ০.৫% শতাংশ ঋণ নিতে হলে চারটির মধ্যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী কাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি তুলেছেন, এখন করোনার মোকাবিলার মধ্যে এই সব সংস্কারের কাজ করতে সময় লাগবে। তাই চলতি বছরে বিনা শর্তে বাড়তি ঋণ নিতে দেওয়া হোক। তা শুনে অর্থ মন্ত্রকের ওই শীর্ষকর্তা বলেন, “রাজ্যকে বুঝতে হবে, বাড়তি ঋণের অনুমতি মানে কিন্তু সেটা অনুদান নয়। বাড়তি ঋণ মানে তা ভবিষ্যতে শোধ করতে হবে। এমনিতেই কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে ঋণের বোঝা যথেষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের ঋণের বোঝা ইতিমধেই যথেষ্ট। এর পরে রাজ্য যখন আরও ধার করবে, তখন চড়া হারে সুদও গুনতে হবে।” ওই আমলার যুক্তি, “ভবিষ্যতে রাজ্যের মাথায় পাহাড়প্রমাণ ঋণ-সুদের বোঝা চাপবে বুঝেও আমরা বিনা শর্তে বাড়তি ঋণের অনুমতি দিতে পারি না। যে সমস্ত শর্ত রাখা হয়েছে, তাতে রাজ্যেরই আর্থিক বৃদ্ধি বাড়বে। আয় বাড়বে। ঋণ শোধ করা সহজ হবে।” র্থ মন্ত্রকের কর্তারা এই যুক্তি দিলেও প্রাক্তন অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারামের প্রশ্ন, বাড়তি ধার না করতে পারলে কোভিড মোকাবিলায় রাজ্য কোথা থেকে অর্থ পাবে? তিনি বলেন, “কেন্দ্রের উচিত রাজ্যকে অর্থসাহায্য করা। কারণ, রাজ্যের কাছে বাড়তি খরচ মেটাতে আয় বাড়ানোর সুযোগ নেই।”

সংস্কারের নামে মোদী সরকার নিজের কর্মসূচি রাজ্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছে বলেও তৃণমূলের আপত্তি রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তাদের দাবি, সংস্কারের শর্ত পূরণ কঠিন নয়। এর মধ্যে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত বিষয়ও নেই। প্রশাসনিক স্তরেই এই কাজ সেরে ফেলা সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Debt Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE