প্রিয়ঙ্কা য়োশিকাওয়া ঘোষ
অপর্ণা সেনের সিনেমায় জাপানি বউয়ের সঙ্গে কোনও দিন দেখা হয়ে ওঠেনি স্নেহময়ের। কিন্তু সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের প্রপৌত্রী এক গাল হেসে বলেন, ‘‘ভাগ্যিস বাবা-মায়ের প্রেমটা তেমন হয়নি! তাই আমি দু’দেশেই এত ভালবাসা পাচ্ছি। জাপান আর কলকাতা দুই জায়গার মানুষই আমায় ঘরের মেয়ে ভাবেন।’’
তিনি প্রিয়ঙ্কা য়োশিকাওয়া ঘোষ। পদবিতে ঘোষ থাকায় জাপানে তাঁর পরিচয় ‘হাফু’ অর্থাৎ সংকর। শৈশবে এ নিয়ে বিদ্রুপও সইতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু ১৭ বছর বয়সে মডেলিং কেরিয়ার শুরু করার পরে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। দ্বিতীয় সংকর সুন্দরী হিসেবে ২০১৬ ‘মিস জাপান ওয়ার্ল্ড’ খেতাব জিতেছেন প্রিয়ঙ্কা।
হাতি সংরক্ষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালায় যোগ দিতে গুয়াহাটিতে এসেছেন প্রিয়ংকা। সৌন্দর্য চর্চার পাশাপাশি এই জাপান-সুন্দরী জংলি হাতি ধরা ও বশ মানানোতেও ওস্তাদ। আবার কিক-বক্সিংয়েও চোস্ত। হাতি সংরক্ষণের বার্তা বিশ্বে ছড়াতে চান তিনি। সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনার ফাঁকে পাঁচতারা হোটেলে আনন্দবাজারকে দেওয়া ভাঙা বাংলার সাক্ষাৎকারে প্রিয়ঙ্কা জানান, প্রফুল্ল ঘোষের ভাইপোর ছেলে অরুণ ঘোষ পড়তে গিয়েছিলেন জাপানে। সেখানেই মা নাওকোর সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে। ২২ বছরের প্রিয়ংকা নিজেকে হাফ বাঙালি বলতে ভালবাসেন। শৈশবের পাঁচ বছর কলকাতায় কাটিয়েছিলেন তিনি। স্কুলেও বাংলা পড়েছেন। ব্যবসায়ী বাবা ও অন্য আত্মীয়রা এত বাংলা বলেন যে বাংলা বলা ও বোঝায় তাঁর কোনও সমস্যাই হয় না। এমনকী মা নাওকোও বাংলা শেখাতেন জাপানে। কিন্তু ওই মিশ্র রক্তের জন্য বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়েছেন তিনি। তাঁকে ‘জাপ সুন্দরী’ ঘোষণা করা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। তাই প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘শরীরে যে বাংলার রক্ত বইছে, তা আমার গর্ব। তবে বাবা বাঙালি হলেও আমি কিন্তু জাপানি।’’ কলকাতার আত্মীয়দের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগও হয় নিয়মিত।
আরও পড়ুন: গুরুঙ্গ আজ আসবেন, দার্জিলিঙে পড়ল পোস্টার
বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর বংশের মেয়ে হওয়ার পরিচয় তাঁকে অবশ্য তেমন প্রভাবিত করেন না। তিনি জানান, ‘‘বাবা প্রায় চার দশক আগে জাপানে গিয়েছিলেন। আমাদের পরিবার রাজনীতি থেকে দূরে। বাবার কাছে অবশ্য তখনকার গল্প অনেক শুনেছি। বাবার স্মৃতিতে থাকা কলকাতায় ছিল দারিদ্র্য, কষ্ট। কিন্তু ৫ বছর আগে ফের কলকাতা ঘুরে এলাম। শহর অনেক বদলেছে। গুয়াহাটি অবশ্য এই প্রথম বার।’’
কলকাতায় ফুচকা, মিষ্টি যেমন পছন্দ তেমনই প্রিয়ঙ্কা ভালবাসেন সত্যজিৎ, রবীন্দ্রনাথ। অপর্ণা সেনের ‘মাই জাপানিজ ওয়াইফ’ পছন্দের ছবি। তবে আক্ষেপ জাপানে তেমন বাংলা ছবি দেখতে পান না। শাহরুখের ফ্যান প্রিয়ঙ্কা এখন রীতিমতো হিন্দি শিখছেন। বেশ কয়েক বার মডেলিংয়ের কাজ নিয়ে মুম্বই ঘুরে গিয়েছেন তিনি। তবে কি ভারতে ছবির ডাক পেলে করতে চান? ঝলমলে হেসে প্রিয়ংকা বলেন, ‘‘অবশ্যই! প্রস্তাব এলে লুফে নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy