Advertisement
E-Paper

মিড ডে মিলে মুখ দিয়েছিল কুকুর! ৮৪ জন পড়ুয়াকে জলাতঙ্কের টিকা, ক্ষতিপূরণের নিদান হাই কোর্টে

মঙ্গলবার ওই মামলায় প্রধান বিচারপতি রমেশ সিনহা এবং বিচারপতি বিভু দত্ত গুরুর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের পরিবারকে ২৫,০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যকে। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এর জন্য রাজ্য সরকারই দায়ী।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ২১:১২

— ফাইল চিত্র।

পড়ুয়াদের মিড ডে মিলে মুখ দিয়েছিল কুকুর! তড়িঘড়ি ৮৪ জন শিশুকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের শুরুর দিকের ঘটনা। ছত্তীসগঢ়ের ওই ঘটনায় রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি, প্রত্যেক পড়ুয়ার পরিবারকে ২৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু কুকুর খাবারে মুখ দেওয়ার পর সেই খাবার খেলে কি সত্যিই জলাতঙ্কের ঝুঁকি থাকে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা?

জলাতঙ্কের জন্য দায়ী র‌্যাবিস ভাইরাস। মূলত লালার মাধ্যমে তা ছড়ায়। র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুর কিংবা অন্য কোনও প্রাণী মানুষকে কামড়ালে সেই ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রামিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক তথা বিভাগীয় প্রধান ইন্দ্রনীল সামন্ত বলছেন, ‘‘প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কামড় থেকেই জলাতঙ্ক ছড়ায়। এ ছাড়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত প্রাণীর দুধ কিংবা মাংস খাওয়া থেকেও জলাতঙ্ক ছড়াতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত এর সপক্ষে কোনও প্রামাণ্য উদাহরণ নেই। তবে সাবধানতা অবলম্বন করাই বাঞ্ছনীয়।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও বা ‘হু’) বলছে, কুকুরের পাশাপাশি বাদুড়, শেয়াল, র‍্যাকুন প্রভৃতির কামড়েও জলাতঙ্ক ছড়াতে পারে। সংক্রামিত প্রাণীর মাংস বা দুধ থেকে জলাতঙ্ক হয়েছে, এমন উদাহরণ নেই। কখনও কখনও ল্যাবরেটরিতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে র‌্যাবিস ভাইরাস ছড়াতে পারে, যেখানে এই ভাইরাস নিয়ে কাজকর্ম হয়। এ ছাড়া হু-এর ওয়েবসাইট বলছে, তাত্ত্বিক ভাবে প্রমাণ করা যায় যে, লালার মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে র‌্যাবিসের সংক্রমণ হতে পারে। ইন্দ্রনীলের বক্তব্য, ২০১২ সালের এক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, মানুষের কামড় থেকে র‌্যাবিস ভাইরাস ছড়িয়েছে। তাই এ ধরনের যে কোনও ক্ষেত্রেই সব রকম সাবধানতা মেনে চলা উচিত। কারণ, জলাতঙ্ক আক্রান্ত হওয়ার পর বাঁচার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। ‘হু’-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রত্যেক বছর জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৪০ শতাংশই শিশু।

র‌্যাবিস ভাইরাস মূলত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। ক্রমে জ্বর, পেশির দুর্বলতা, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, হ্যালুসিনেশন, লালা পড়া, গিলতে কষ্ট হওয়া, জল দেখলে ভয় লাগা— ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দেয়। কখনও আবার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি এক এক করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে শুরু করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর কয়েক দিনের মধ্যেই মৃত্যু হয়।

চলতি মাসের শুরুতে ছত্তীসগঢ়ের বলোদাবাজার জেলার ওই সরকারি স্কুলে কোনও ভাবে একটি কুকুর মিড ডে মিলে মুখ দিয়ে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে ৮৪টি শিশুকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়া হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন সূত্রে খবর পেয়ে গত ৪ অগস্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলাটি গ্রহণ করে ছত্তীসগঢ় হাই কোর্ট। মঙ্গলবার ওই মামলায় প্রধান বিচারপতি রমেশ সিনহা এবং বিচারপতি বিভু দত্ত গুরুর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের পরিবারকে ২৫,০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যকে। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এর জন্য রাজ্য সরকারই দায়ী। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিশুদের কী খাবার দেওয়া হচ্ছে, তা যাচাই করা উচিত ছিল। মিড ডে মিল নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়। ফলে সেই দায়িত্ব যথাযথ গুরুত্ব সহকারেই পালন করতে হবে। কাউকে, বিশেষত নিষ্পাপ শিশুদের এমন খাবার কী ভাবে পরিবেশন করা হল? রাজ্য সরকার স্কুলগুলির উন্নয়নে এত টাকা ব্যয় করছে, অথচ কর্তৃপক্ষের তরফে এ ধরনের গাফিলতি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’’ ইতিমধ্যে ওই স্কুলের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক-সহ আরও কয়েক জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রাজ্যকে এই ঘটনায় তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

Chhattisgarh Dog rabies Rabies Vaccine Anti Rabies High Court Mid Day Meal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy