সংশোধিত ওয়াকফ আইনের উপর সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ জারি করল না সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার শীর্ষ আদালত অন্তর্বর্তী রায় দিয়ে জানিয়েছে, ওই আইনের সব ধারা সম্পূর্ণ ভাবে স্থগিত করার কোনও যুক্তি নেই। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, জেলাশাসক সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। কারণ, এতে আইন, আদালত আর প্রশাসনের প্রদত্ত আলাদা ক্ষমতা লঙ্ঘিত হবে। প্রসঙ্গত, সংশোধিত আইনে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা জেলাশাসক বা সম পদমর্যাদার আধিকারিকদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে মুসলিম সম্প্রদায় তাদের অধিকার হারাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চ সংশোধিত আইনের তিন (আর) অনুচ্ছেদটির উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি গবই এবং বিচারপতি এজি মসিহ-র বেঞ্চ জানিয়েছে, যত দিন না ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দেয়, তত দিন কোনও তৃতীয় ব্যক্তিকে অন্য কারও বিরুদ্ধে নতুন অধিকার দেওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখা যাবে। তবে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে সর্বোচ্চ ৪ জন অমুসলিম সদস্য থাকতে পারবেন, রাজ্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ জন।
সংশোধিত ওয়াকফ আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তিকে ওয়াকফ প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাঁকে অন্তত পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালন করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনের এই অংশের উপরও স্থগিতাদেশ দিয়েছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, নিয়ম না থাকলে এতে অন্যায় ভাবে ক্ষমতার ব্যবহার হতে পারে।
ওয়াকফ আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। গত ২২ মে ওই মামলায় রায়দান স্থগিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। আজ এই মামলায় রায় জানাল সুপ্রিম কোর্ট। সংসদের উভয় কক্ষে বিল পাশ হওয়ার পরে গত ৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতিক্রমে তৈরি হয় সংশোধিত ওয়াকফ আইন, ২০২৫।
এর আগে মামলার শুনানির সময়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি হবে কি না, শুধু সেটিই আদালত বিবেচনা করছে। কেন স্থগিতাদেশ জারি করা উচিত নয়, তা নিয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর বক্তব্য ছিল, কোনও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে বলে এই নয় যে, শুধু সেই কারণের জন্য আইনসভায় পাশ হওয়া একটি আইনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া যায়।
মামলাকারী পক্ষের অন্যতম অভিযোগ ছিল, সংশোধিত আইনের মাধ্যমে অমুসলিমদের ওয়াকফ তৈরির অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যদিও সলিসিটর জেনারেল শীর্ষ আদালতে জানিয়েছিলেন, ওয়াকফ তৈরি করা এবং ওয়াকফে সম্পত্তি দান করা ভিন্ন বিষয়। মেহতার বক্তব্য ছিল, যদি কোনও হিন্দু মসজিদ তৈরি করতে চান, তবে ওয়াকফ তৈরির কী দরকার? তিনি তো ট্রাস্ট তৈরি করেই সেটি করতে পারেন।