Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Central Vista

সেন্ট্রাল ভিস্টায় সবুজ সঙ্কেত সুপ্রিম কোর্টের

তিন বিচারপতির বেঞ্চে এক বিচারপতি তাতে অসম্মতি জানালেন। তবে তিন জনের মধ্যে দু’জন বিচারপতি ছাড়পত্র দেওয়ায় সেই রায়ই বহাল থাকবে।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৫৪
Share: Save:

সবুজ সঙ্কেত মিলল। কিন্তু তাতেও প্রশ্নের কাঁটা রয়ে গেল।

দিল্লির রাজপথের দু’পাশের এলাকার পুনর্নির্মাণ ও নতুন সংসদ ভবন তৈরিতে আজ নরেন্দ্র মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্র পেয়ে গেল। কিন্তু তিন বিচারপতির বেঞ্চে এক বিচারপতি তাতে অসম্মতি জানালেন। তবে তিন জনের মধ্যে দু’জন বিচারপতি ছাড়পত্র দেওয়ায় সেই রায়ই বহাল থাকবে।

বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, করোনার অতিমারির মোকাবিলায় অর্থ খরচ না করে সরকার কেন রাজধানী সাজাতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে? ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস সেরে ফেলেছেন। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত রাজপথ-এর দু’পাশের এলাকা ও বিভিন্ন সরকারি ভবনের পুনর্নির্মাণের ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’ প্রকল্পের রূপরেখা তৈরির কাজও শেষ। গোটা প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রাক্তন সেনাকর্তা, পরিবেশ মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব-সহ একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, জমির ব্যবহার ও পরিবেশের ছাড়পত্রের প্রক্রিয়ায় নিয়ম-কানুন
মানা হয়নি।

আজ সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি এ এম খানউইলকর ও বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী যাবতীয় মামলা খারিজ করে দিয়ে সেন্ট্রাল ভিস্টায় সবুজ সঙ্কেত দিলেও, তৃতীয় বিচারপতি সঞ্জীব খন্না বলেছেন, জমির চরিত্র বদলের ছাড়পত্র আইন মেনে দেওয়া হয়নি। একে ‘ব্যাড ইন ল’ আখ্যা দিয়ে বিচারপতি খন্না যুক্তি দিয়েছেন, হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির আগাম ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। সে কারণেই বিষয়টি ফের জনশুনানির জন্য পাঠানো হয়েছিল। পরিবেশের ছাড়পত্রের নির্দেশিকাতেও কেন ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার কোনও কারণ বা যুক্তি দেওয়া হয়নি বলে রায় দিয়েছেন বিচারপতি খন্না। উল্টো দিকে বিচারপতি খানউইলকর ও বিচারপতি মাহেশ্বরী প্রকল্পে সায় দিয়ে বলেছেন, জমির চরিত্র বদলের ক্ষেত্রে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি নিজের ক্ষমতা সঠিক ভাবেই কাজে লাগিয়েছে। পরিবেশের ছাড়পত্রও নিয়ম মেনেই হয়েছে। তাঁদের মতে, যখন মূল কাজ শুরু হবে, তখনই হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে। কাজের সময়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাতাসে জলীয় বাষ্প মিশিয়ে দেওয়ার জন্য ‘স্মগ গান’ ব্যবহার করতে বলেছে আদালত।

সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পে নতুন সংসদ ভবন ছাড়াও নতুন কেন্দ্রীয় সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতির নতুন বাসভবন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাসের আগেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, শিলান্যাস হলেও নতুন সংসদ ভবনের জন্য কাজ শুরু করা যাবে না। চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত শীর্ষ আদালত গোটা প্রকল্পের কাজই বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য প্রথম থেকেই বলে আসছে, নতুন সংসদ ভবন ও নতুন সচিবালয় তৈরি করা প্রয়োজন। কারণ বর্তমান ভবনে প্রবল চাপ পড়ছে।

এক নজরে সেন্ট্রাল ভিস্টা

রাষ্ট্রপতি ভবন-ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত রাস্তার ভোলবদলের পরিকল্পনা

• ত্রিকোণাকার নয়া সংসদ ভবনে দুই কক্ষ মিলিয়ে ১,২২৪ জন সাংসদ বসতে পারবেন

• নয়া সংসদ ভবনে থাকবে ‘সংবিধান হল’। সংবিধানের আদি কপি রাখা থাকবে সেখানে। দফতরে কাগজের ব্যবহার কমাতে রাখা হবে আধুনিক ডিজিটাল পরিকাঠামো।

• তৈরি হবে একটি কেন্দ্রীয় সচিবালয়ও।

• প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন সরিয়ে আনা হতে পারে সাউথ ব্লকের কাছে। নর্থ ব্লকের কাছে তৈরি হতে পারে উপরাষ্ট্রপতির নয়া বাসভবন।

• ভাঙা হবে উপরাষ্ট্রপতির বর্তমান বাসভবন-সহ কয়েকটি ভবন।

• প্রকল্পের মোট খরচ ১৩,৪৫০ কোটি টাকা।

আপত্তি কোথায়

• ওই এলাকার জমির ব্যবহারে বদলের অনুমতি, পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা সুপ্রিম কোর্টে।

• মঙ্গলবার সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে এই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি এ এম খানউইলকরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।

• জমির ব্যবহারে বদল নিয়ে ভিন্নমত বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। আলাদা রায় দিয়েছেন তিনি।

এর আগে রামমন্দির ও তিন তালাকের রায়েও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা পুরোপুরি একমত হতে পারেননি। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পে ছাড়পত্র দিলেও বিরোধীরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, এটা আইনি প্রশ্ন নয়। সরকারের অগ্রাধিকারের প্রশ্ন। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘১৩,৪৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্প এক আত্মমুগ্ধ, নিরঙ্কুশ শাসকের ইচ্ছেমতো উপায়ে ইতিহাসে নিজের নাম খোদাই করে যাওয়ার চেষ্টা। ভুল অগ্রাধিকারের জ্বলন্ত উদাহরণ। করোনা অতিমারি, আর্থিক মন্দার সময়ে সরকারের কাছে সেন্ট্রাল ভিস্টায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা, প্রধানমন্ত্রীর নতুন বিমানের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা খরচের অর্থ রয়েছে। কিন্তু লাদাখে চিনের সেনার বিপরীতে মোতায়েন আমাদের সেনার জন্য গরম তাঁবু জোগানোর অর্থ নেই। সরকার ১.১৩ কোটি ফৌজি ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী, পেনশনভোগীদের মহার্ঘ ভাতা বাবদ ৩৭,৫৩০ কোটি টাকা কেটে নিয়েছে।’’

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা আজ তাঁদের রায়ে স্বগতোক্তির মতোই প্রশ্ন তুলেছেন, আদালতের কাছে কি কেন্দ্রীয় সরকারকে নীতি বাতলে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে?
উন্নয়নের একটি বিশেষ দিকে নজরের ক্ষেত্রের সরকারের বিচক্ষণতা নিয়ে কি আদালত প্রশ্ন তুলতে পারে? আইনের ভিত্তি ছাড়া আদালত কি সরকারকে নৈতিক বিষয়ে
নির্দেশ দিতে পারে? আদালতকে শেষ পর্যন্ত আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হয় বলেই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Central Vista Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE