বিগত কয়েক মাসে আকাশভাঙা বৃষ্টির জেরে একাধিক বার বড়সড় হড়পা বানের মুখে পড়েছে হিমালয়ের বিভিন্ন এলাকা। এমন পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক সময়ে জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশ জুড়ে ভূমিধস তথা হড়পা বানের জেরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। রুজু হয়েছে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলাও। উদ্দেশ্য— পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা। বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ জানিয়েছে, মামলাটির ক্ষেত্রে সমগ্র হিমালয়ের প্রেক্ষিতেই হিমাচলপ্রদেশের পরিবেশের ভারসাম্য হারানোর বিষয়টি বিচার করা হবে। এই ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে কেন্দ্রেরও দায়িত্ব আছে। আদালত সূত্রে খবর, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে কেন্দ্রকে কোনও নির্দেশ দিতে পারে দেশের শীর্ষ আদালত।
গত ২৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ একটি শুনানিতে জানিয়েছিল, যদি এখনই ‘সঠিক’ পদক্ষেপ করা না হয়, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে হিমাচল প্রদেশ নামক রাজ্যটি ‘হাওয়ায় বিলীন’ হয়ে যেতে পারে। পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগকে সমর্থন জানিয়ে সেই বেঞ্চেরও পরামর্শ ছিল, বন্ধ করা হোক অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন।
উন্নয়নের নামে যথেচ্ছ গাছ কাটা,পাহাড়ের কোলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ ইত্যাদি হিমালয়ের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে জানিয়েছিল আদালত। সেই শুনানির সূত্র ধরেই এই স্বতঃপ্রণোদিত মামলাটি রুজু করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। ছবি: পিটিআই।
বিগত প্রায় এক দশক ধরে উন্নয়নের নামে হিমালয়ের প্রান্তে চলছে নির্মাণ-যজ্ঞ। পাহাড় কেটে ঝাঁ-চকচকে রাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে, পাহাড় ফুঁড়ে সুড়ঙ্গ নির্মাণ— বাদ যায়নি কিছুই। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন শিল্পের পরিসর বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের উপরে প্রভাব পড়ছে, এমন অভিযোগ বারবার জানিয়েছেন দেশের পরিবেশপ্রেমীরা। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে হড়পা বানে কেদারনাথে মৃত্যু হয়েছিল ছ’হাজারেরও বেশি পূণ্যার্থীর। সেই ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়নের জোয়ারে রাশ টানার বার্তা দিয়েছিলেন পরিবেশপ্রেমীরা। এ ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষ আদালতের মত, হিমালয়ের কোলে অবস্থিত রাজ্যগুলিতে পরিবেশের ভারসাম্য যাতে রক্ষিত হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেন্দ্রেরও। মামলার শুনানিতে বিচারপতি সন্দীপ মেহতা বলেন, ‘‘বিষয়টি কোনও ভাবেই হিমাচলপ্রদেশে আটকে থাকবে না। পুরো হিমালয় এই পরিস্থিতির শিকার। খুবই কঠিন সময়।’’
গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে রুজু হওয়া মামলার শুনানিতে হিমাচলপ্রদেশের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিচারপতিদের জানান, এই বিষয়ে হিমাচলপ্রদেশ সরকারের তরফে একটি রিপোর্ট ইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে। সেই রিপোর্টে যথেচ্ছ গাছ কাটার পাশাপাশি যত্রতত্র খনিজ সামগ্রী উত্তোলন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে হিমবাহ গলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিগুলির উল্লেখ রয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)