ভারতে স্থাবর সম্পত্তির ক্রয় বা বিক্রয়ের পদ্ধতি ‘বড্ড বেদনাদায়ক।’ এখনও ঔপনিবেশিক আইনে নিয়ন্ত্রিত জমি আইনের সংস্কারের প্রয়োজন। একটি মামলার প্রেক্ষিতে এমনই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের।
গত শুক্রবার বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ জমি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি করে। তাতে বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, এ দেশের দেওয়ানি মামলার ৬৬ শতাংশই হল সম্পত্তির বিরোধ সংক্রান্ত। তার বড় কারণ হল জমি আইনের কিছু প্রতিবন্ধকতা। এর সুবিধা নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা প্রোমাটার। জমি ক্রয়-বিক্রয়ে ঠকছেন প্রচুর মানুষ। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, সারা দেশে সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং সহজ করার জন্য ব্লকচেন প্রযুক্তি গ্রহণ করুক কেন্দ্র। তারাই নেতৃত্ব দিক। শুধু তা-ই নয়, দেশের আইন কমিশনকে সম্পত্তি লেনদেন নিয়ন্ত্রণকারী ‘শতাব্দীপ্রাচীন ঔপনিবেশিক যুগের আইন’ পুনর্গঠনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
দুই বিচারপতির বেঞ্চ সম্পত্তির জাল নথিপত্র, জমিদখল, বিলম্বিত যাচাই প্রক্রিয়া, সম্পত্তি কেনার সময় মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ‘অব্যবস্থা’, এমনকি, নথি যাচাইয়ের জন্য দু’জন সাক্ষীর প্রয়োজনীয়তাকে সম্পত্তি লেনদেনে বিলম্বের কারণ এবং অযাচিত বাধা বলে চিহ্নিত করেছে। বিচারপতি নরসিংহ বলেন, ‘‘এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি বলবেন সম্পত্তি কেনা বা বিক্রি করা খুব সহজ।’’ স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা নিয়েও ডিভিশন বেঞ্চের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কোনও স্থাবর সম্পত্তি কেনার দলিল রেজিস্ট্রি করা হলেই তা মালিকানার নিশ্চিত গ্যারান্টি দেয় না। এই রেজিস্ট্রেশন শুধুমাত্র একটি লেনদেনের পাবলিক রেকর্ড হিসাবে কাজ করে এবং এটি মালিকানার চূড়ান্ত প্রমাণ নয়। সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, জমির রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত পদ্ধতিও রাজ্যভেদে বিভিন্ন। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী জমি রাজ্যের বিষয়। এখন স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা সাংবিধানিক ভাবে সুরক্ষিত রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়মের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
শীর্ষ আদালত এ-ও বলেছে যে, মামলা-মোকদ্দমা এবং মানুষের কষ্টের অন্যতম একটি কারণ হল বর্তমান আইনের অধীনে সম্পত্তির মালিকানা এবং রেজিস্ট্রেশনের মধ্যেকার ফারাক। আদালতের কথায়, ‘‘ব্লকচেন প্রযুক্তি জমির মালিকানা, মালিকানার ইতিহাস, দায়বদ্ধতা এনকোড করে। এটি অধিক স্বচ্ছ পদ্ধতি। সরকারের উচিত, এই পদ্ধতি জমি ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা।’’