গার্হস্থ্য হিংসায় আক্রান্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাত দফা নির্দেশিকা জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারকে এ বিষয়ে সবিস্তার নির্দেশ জারি করে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, গার্হস্থ্য হিংসা রোধ বিষয়ক দু’দশকের পুরনো আইনটি ঠিকমতো প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না, সে দিকে যেন খেয়াল রাখে সরকার। গত ২০ মে এই নির্দেশিকা জারি করেছিল বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ। আজ সেই নির্দেশের সবিস্তার প্রতিলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
বিচারপতিদের মতে, ২০০৫ সালের গার্হস্থ্য হিংসা রোধ আইনটি এখনও ঠিকমতো প্রয়োগ করা হয় না। ফলে এই আইনের আওতায় যে ধরনের সুবিধা এক জন আক্রান্তের পাওয়া উচিত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা তিনি পান না। এই পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে সাত দফা নির্দেশিকা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
১। রক্ষাকারী (প্রোটেকশন) অফিসার চিহ্নিত ও নিয়োগ। নারী ও শিশু সুরক্ষা দফতরের অফিসারদের চিহ্নিত করে জেলা ও তালুক স্তরে নিয়োগ করতে হবে।
২। নির্দেশিকা জারির ৬ সপ্তাহের মধ্যে এই রক্ষাকারী অফিসারদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। এই নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য সচিবদের এবং নারী ও শিশু সুরক্ষা দফতর সচিবদের।
৩। গার্হস্থ্য হিংসা রোধ আইনের আওতায় এক জন আক্রান্ত কী ধরনের সুযোগসুবিধা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো। শুধু জনসাধারণ-ই নয়, সচেতনতা বাড়াতে হবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি অফিসার, পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সকলের। জনসংযোগের জন্য সংবাদমাধ্যমকে কাজে লাগাতে হবে এবং নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে হবে।
৪। ১১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আইনটির সফল প্রয়োগের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসারেরা যেন নিয়মিত তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন।
৫। ৭(ঘ) ও ১২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, গার্হস্থ্য হিংসায় আক্রান্তদের আইনি সুরক্ষা ও বিনামূল্যে আইনি সাহায্য দিতে হবে। এক জন আক্রান্ত যেন এ বিষয়ে সচেতন হন যে, তিনি চাইলেই বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পেতে পারেন। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর দায়িত্ব জেলা ও তালুক স্তরের সচিবদের।
৬। আক্রান্তকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে যথেষ্ট প্রচার করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে জেলা ও তালুক স্তরের সচিবদের নজর রাখতে হবে।
৭। ১০ নম্বর ধারা অনুয়ায়ী আক্রান্তদের জন্য ‘নারী নিকেতন’ বা শেল্টার হোমের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। জেলা ও তালুক স্তরে এই ধরনের হোম পর্যাপ্ত আছে কি না, তা দশ সপ্তাহের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে অফিসারদের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)