কলকাতায় হাতে টানা রিকশা ‘নিষিদ্ধ’ হয়ে গিয়েছে আজ থেকে ১৮ বছর আগে। কিন্তু তার পরেও শহরের কোনও কোনও প্রান্তে, অলিতে গলিতে এখনও দেখা যায় তার অবাধ চলাচল। শুধু কলকাতাই নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও এ ধরনের রিকশার চল রয়েছে। সেই হাতে টানা রিকশা পরিষেবাকে ‘অমানবিক’ বলল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
কলকাতার মতো মহারাষ্ট্রের মাথেরানেও হাতে টানা রিকশা চলে। সেই পেশাকেই এ বার ‘অমানবিক’ এবং ‘সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী’ বলল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার মাথেরানে এখনও হাতে টানা রিকশার চল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, মানুষ মানুষকে বয়ে বেড়াচ্ছেন, এমন অমানবিক প্রথা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। পাহাড়ি এলাকায় ই-রিকশা চালু করার বিষয়ে একটি আবেদনের শুনানিতে এই মন্তব্য করেন দেশের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গবই বলেন, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে একজন মানুষ অন্য জনকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন অমানবিক প্রথা এখনও মাথেরানে প্রচলিত।’’ শুধু তা-ই নয়, স্বাধীনতা অর্জনের ৭৮ বছর এবং সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭৫ বছর পরেও এই ধরনের প্রথা অব্যাহত রাখার অর্থ ভারতের জনগণকে দেওয়া সংবিধানের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা, এমনটাও বলেছেন গবই।
আরও পড়ুন:
গবই বলেন, “কেউই স্বেচ্ছায় রিকশা চালান না। নেহাত জীবিকা নির্বাহের অন্য কোনও উপায় নেই বলেই চালান। আর ভারতের মতো দেশে যে এখনও এই পেশা চলছে, তা আদতে সংবিধানে উল্লিখিত মানুষের মর্যাদার মৌলিক ধারণার মূলে আঘাত করে।” এর পরেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, আগামী ছ’মাসের মধ্যে মাথেরানে হাতে টানা রিকশার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, বিকল্প জীবিকার অভাবে যাঁরা এত দিন হাতে টানা রিকশা চালিয়েছেন, সেই সব রিকশাচালকদের পুনর্বাসনের জন্য যত দ্রুত সম্ভব পরিকল্পনা করতে হবে রাজ্যকে। এই রিকশার বদলে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ই-রিকশা ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব ই-রিকশা চালু করার জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে বলা হয়েছে।