Advertisement
E-Paper

শুধু বাংলায় কথা বলার জন্য সরকার এক জনকে বাংলাদেশি বলে ধরে নেবে? কেন্দ্রের কাছে প্রতিক্রিয়া চাইল শীর্ষ আদালত

বীরভূম জেলার আট মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা এবং তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৫ ১৮:৩৬
Supreme Court On Bangladeshi

‘বাংলা এবং বাংলাদেশি’ সমস্যা নিয়ে শুনানি হল সুপ্রিম কোর্টে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভিন্‌রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করে আন্দোলনে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল। তখনই বাংলাভাষী এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সংক্রান্ত মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি বিপুল এম পাঞ্চোলির ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, ‘‘বাংলা বলার কারণে কি সরকার কাউকে বাংলাদেশি বলে ধরে নিতে পারে?’’ দেশের নিরাপত্তার উপরে জোর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষ আদালতের ব্যাখ্যা, শুধুমাত্র ভাষার জন্য কাউকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা যায় না। বিশেষ করে ভারতের মতো বহু ভাষাভাষীর দেশে।

বাংলার বীরভূম জেলার আট মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা এবং তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড। মামলায় পক্ষ করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার-সহ অন্যদের। ওই মামলা কলকাতা হাই কোর্টকে শোনার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানিতে বিচারপতি বাগচী জিজ্ঞাসা করেন, এক জন ব্যক্তি কোন ভাষায় কথা বলেন, তা দিয়ে কারও নাগরিকত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই, আপনি পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ স্পষ্ট করুন— একটি ভাষা দিয়ে কাউকে বিদেশি বলে অনুমান করা হচ্ছে।’’

সেই সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের সংগঠনের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ তাঁর সওয়ালে জানান, বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকেরা আতঙ্কে রয়েছেন। বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের আটক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের ভাষা বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলা বলার জন্য সন্দেহের বশে আটক করা হচ্ছে। কোনও পদ্ধতি মানা হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক আইন ভাঙা হয়েছে। কাউকে এ ভাবে জোর করে আটক করা যায় না।’’ সেই সময়ে তিনি বীরভূমের বাসিন্দা সোনালি বিবিকে আটক করার বিষয়টি তুলে ধরেন। আইনজীবী ভূষণ বলেন, ‘‘ওই মহিলা সন্তানসম্ভবা। কোনও প্রমাণ ছাড়া তাঁকে বিদেশি বলে দাগিয়ে দিয়ে জোর করে দেশের বাইরে ঠেলা দেওয়া হয়েছে। কারণ, ওঁরা বাংলা বলেন। ধরে নেওয়া হচ্ছে, বাংলায় কথা বলেন মানেই বাংলাদেশি। এই ভাবে কী করে কর্তৃপক্ষ কাউকে বিদেশি ঘোষণা করতে পারেন?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেক সময় বিএসএফ কাউকে সন্দেহ করে ধরছে। বলা হচ্ছে, দৌড়ে ও পারে পালাও। না-হলে গুলি করব।’’

পাল্টা কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল জিজ্ঞাসা করেন, এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে কোনও ব্যক্তি কেন আদালতে আসছেন না? কেন সংগঠন এসে মামলা করছে? ব্যক্তিগত ভাবে কেউ বলুন। আর ভারত তো অনুপ্রবেশকারীদের রাজধানী হতে পারে না!’’ বিচারপতী বাগচী তখন জানান, দেশের নিরাপত্তার দিকে নজর দিতেই হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মামলায় দুটি স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে। এক, আমাদের দেশের নিরাপত্তা। সেটা নিয়ে কারও কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। কিন্তু একই ভাবে মনে রাখতে হবে আমাদের বহু ভাষাভাষীর দেশ ভারত। আমরা সংবাদপত্রের রিপোর্ট ধরে কথা বলছি না। আমরা আবেদন করছি, আপনাদের (সরকার) অবস্থান স্পষ্ট করুক।’’

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এফআইআর দায়ের হলে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করতেই হবে প্রশাসনকে। কিন্তু বাংলা বলার জন্য হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হচ্ছে, এমন অভিযোগও আসছে। এই বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরে। পাশাপাশি শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, সোনালি এবং তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার ভিত্তিতে করা হেবিয়াস কর্পাস মামলা শুনবে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

Supreme Court Bangladeshi Bengali Language
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy