মাসে এক বার করে স্ত্রীর উদ্দেশে ‘তালাক’ শব্দটি উচ্চারণ করলেই তিন মাস পর বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হতে পারে। মুসলমান সমাজে এই পদ্ধতি ‘তালাক-ই-হাসান’ নামে পরিচিত। এ বার সেই রীতি নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদৌ এ ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ সম্ভব কি না, সভ্য সমাজে এই নিয়ম চালু থাকতে পারে কি না, প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলা বিবেচনার জন্য পাঠানো হতে পারে।
‘তালাক-ই-হাসান’ প্রক্রিয়ায় স্ত্রীর উদ্দেশে মাসে এক বার করে যদি পর পর তিন মাস ‘তালাক’ বলা যায়, তবে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। স্বামী সে ক্ষেত্রে যে কোনও ব্যক্তিকে দিয়ে স্ত্রীর হাতে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস ধরাতে পারেন। সাধারণত, তা আইনজীবীর হাত দিয়ে পাঠানো হয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে আর বিবাহবিচ্ছেদ গ্রাহ্য হবে না। এই গোটা প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঞা এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংহের বেঞ্চ। ভর্ৎসনা করা হয়েছে বিচ্ছেদে ইচ্ছুক এক স্বামীর আইনজীবীকেও। আদালত জানিয়েছে, এই প্রথা যদি সমাজকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে, তবে তার প্রতিকারের জন্য আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হতেই পারে। বিষয়টি পাঠানো হতে পারে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে।
আরও পড়ুন:
‘তালাক-ই-হাসান’ প্রক্রিয়ায় বিবাহবিচ্ছিন্না একদল মুসলিম মহিলা ‘বিচার’ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। অভিযোগ, তাঁদের স্বামী ‘তালাক-ই-হাসান’ প্রক্রিয়ায় তাঁদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন এবং আইনজীবীর হাত দিয়ে বিচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছেন। এর ফলে সন্তানের পড়াশোনা থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ওই মহিলাদের। প্রক্রিয়ার পক্ষে লড়া এক আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এটা কী ধরনের জিনিস? ২০২৫ সালে এটা কী ভাবে আপনি প্রচার করছেন? আমরা যে ধর্মই অনুসরণ করি না কেন, এটা কি সমর্থন করা যায়? তা হলে নারীর মর্যাদা রক্ষা হবে কী ভাবে? কোনও সভ্য আধুনিক সমাজে এই প্রথা চলতে পারে নাকি?’’
মামলাকারী মহিলাদের সাহস ও সদিচ্ছার প্রশংসা করেছেন বিচারপতিরা। সেই সঙ্গে তাঁদের পর্যবেক্ষণ, দেশের নানা প্রান্তে এমন আরও লক্ষ লক্ষ মহিলা আছেন, যাঁরা ‘তালাক-ই-হাসান’-এর বিরুদ্ধে সরব হতে পারছেন না। আদালতের হস্তক্ষেপে এর প্রতিকার প্রয়োজন বলে মনে করেছে বেঞ্চ। এর আগে এ বিষয়ে জাতীয় মহিলা কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় শিশুসুরক্ষা কমিশনের বক্তব্যও জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত।
মুসলিম সমাজে প্রচলিত তিন তালাক প্রথা ২০১৭ সালে বাতিল করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই প্রথা অনুসারে, যে কোনও সময়ে তিন বার স্ত্রীর উদ্দেশে ‘তালাক’ শব্দ উচ্চারণ করলেই বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হত। এই প্রথাকে আদালত ‘অসাংবিধানিক’ এবং বেআইনি ঘোষণা করে। বলা হয়েছিল, মুসলিম মহিলাদের মৌলিক অধিকার এই ‘স্বেচ্ছাচারী’ প্রথায় লঙ্ঘিত হয়। তালাকের অন্য পদ্ধতিতেও এ বার আপত্তি তুলল সুপ্রিম কোর্ট।