বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে ফের নরেন্দ্র মোদীর কোর্টেই বল পাঠিয়ে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তীর্থ সিংহ ঠাকুর। বিভিন্ন হাইকোর্টে নিয়োগের জন্য পাঁচ প্রবীণ বিচারপতির কলেজিয়াম ৭৭ জনের নাম সুপারিশ করেছিল কেন্দ্রের কাছে। তাঁদের মধ্যে থেকে ৩৪ জনকে নিয়োগ করা হলেও বাকি ৪৩ জনের নাম খারিজ করে দিয়েছিল সরকার। বলা হয়েছিল, এঁরা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের যোগ্য নন। আজ শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা জানিয়ে দিলেন, কেন্দ্রের এই আপত্তি তাঁরা মানছেন না। ওই ৪৩ জনের নামই পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হচ্ছে।
গত বছরের অক্টোবরে মোদী সরকারের জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন সংক্রান্ত আইন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। সেই থেকে সংঘাতের শুরু। বিচারপতি নিয়োগের নতুন প্রক্রিয়া নিয়ে কলেজিয়ামের সঙ্গে সরকারের টানাপড়েন চলছে। কেউই শেষ
কথা বলার অধিকার ছাড়তে নারাজ। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হচ্ছে না বলে সরকার আগের পদ্ধতিতে বিচারপতি নিয়োগ আটকে রাখছে কেন— এই প্রশ্ন তুলে বারবার কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধান বিচারপতি।
গত ২৮ অক্টোবরের শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সচিব ও আইন মন্ত্রকের সচিবকে আদালতে ডেকে পাঠাবেন। এর পরেই অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি আদালতকে জানিয়ে দেন, কলেজিয়ামের প্রস্তাবিত ৭৭ জনের মধ্যে ৪৩ জনের নাম সরকার খারিজ করছে।
আদালত সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার কলেজিয়ামে মোদী সরকারের ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই ঠিক হয়, সরকারের আপত্তি মানা হবে না। আজ প্রধান বিচারপতি ঠাকুর এবং বিচারপতি এ আর দাভের বেঞ্চে শুনানির সময় রোহতগি ওই প্রসঙ্গ তুলতেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সরকারের খারিজ করে দেওয়া ৪৩ জনের নাম আমরা ফের সুপারিশ করছি। সরকারের পুনর্বিবেচনার জন্য তা ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’’ রোহতগি বলেন, এই বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না।
আজকের পরে ‘বিচার বিভাগ বনাম সরকার’ দ্বন্দ্ব কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে শীর্ষ আদালত ও আইন মন্ত্রকে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কলেজিয়াম নাম ফেরত পাঠালে সরকার তা মেনে নিতে বাধ্য। আইনজীবীদের অনেকেই মনে করছেন, সরকার সংঘাত আরও বাড়াতে চাইলে নামগুলির বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে বসে থাকতে পারে। আইন মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, কলেজিয়ামের সুপারিশ করা যে সব নাম খারিজ করা হয়েছিল, তা গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি, যৌন হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে গত ৩ অগস্ট সরকারের অবস্থান কলেজিয়ামকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে কলেজিয়ামের তরফ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। অনেক আইনজীবীর আশঙ্কা, কাদের নাম, কেন খারিজ করা হয়েছে, তা-ও হয়তো এ বার ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যে জনস্বার্থ মামলা নিয়ে এত কাণ্ড, তার শুনানি ফের শীতকালীন ছুটির পরে ২ জানুয়ারি আদালত খোলার পরে হবে বলে ঠিক হয়েছে। এ দিকে, বর্তমান প্রধান বিচারপতি ঠাকুর ৩ জানুয়ারি অবসর নেবেন। অনেক আইনজীবীই মনে করছেন, প্রধান বিচারপতি ঠাকুর অবসর নিলেও সরকারের সঙ্গে বিচারপতিদের এই সংঘাত থামবে, এমন সম্ভাবনা নেই। গত সপ্তাহেই প্রধান বিচারপতি কলকাতায় মন্তব্য করেছিলেন, দেশের বিভিন্ন আদালতে জমে থাকা মামলার সংখ্যা ৩ কোটি। এ ছাড়া বিভিন্ন হাইকোর্টে জমে রয়েছে ৪০ লক্ষ মামলা। ৩ কোটি মামলার মধ্যে ৮০ শতাংশ মামলা দেশের আটটি রাজ্যের। তাঁর ক্ষোভ, এই সব জমে থাকা মামলার দায় চাপানো হচ্ছে বিচার ব্যবস্থার উপরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy