ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) মামলায় নির্বাচন কমিশনকে নোটিস জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। তবে একই সঙ্গে আবেদনকারীদের উদ্দেশে শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, ‘‘এসআইআর নিয়ে আপনারা কেন এত ভয় পাচ্ছেন?’’ মামলাকারীদের পক্ষে জানানো হয়েছে, এসআইআর নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে কমিশন। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এত তাড়া কিসের?’’
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে। পরে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলও এসআইআরের যৌক্তিকতা তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। এ ছাড়াও, কংগ্রেস, সিপিএমের মতো দলগুলিও শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। মামলাকারীদের একাংশের আবেদন, এক মাস কেন, এসআইআর প্রক্রিয়ার সময় আরও কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া হোক। আগে এসআইআর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা চলছিল সেই শুনানিতেই ডিএমকে, তৃণমূলের আবেদন মঙ্গলবার একসঙ্গে শোনে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ।
মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে বলেন, ‘‘আগে এসআইআর করতে তিন বছর সময় লাগত। এখন তারা (নির্বাচন কমিশন) বলছে এক মাসে শেষ করবে। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সব জায়গায় ৫জি বা ৪জি ইন্টারনেট সংযোগ নেই। সেই সব এলাকায় এসআইআর নথি অনলাইনে আপলোড করা সমস্যা।’’
সিব্বলের সওয়াল, এসআইআরের পুরো প্রক্রিয়া হবে ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর। এক মাসের মধ্যে শেষ হবে। যাঁদের নাম বাদ যাবে, তাঁদের কবে নোটিস জারি করা হবে? বিহারের ক্ষেত্রে যেমন এসআইআর প্রক্রিয়ার মধ্যেই নোটিস জারি হয়েছে। এখানে তো তা হচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, ১৩তম নথি হিসাবে বিহারের এসআইআরের কথা বলেছে কমিশন। সিব্বলের প্রশ্ন, বিহারের এসআইআরের সঙ্গে অন্য রাজ্যের এসআইআরের কী সম্পর্ক?
শুনানিতে সিব্বল আরও বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতি ভিন্ন। কোথাও এ সময় প্রচুর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, কোথাও নেই। এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে যোগাযোগের কোনও ব্যবস্থা নেই। সেখানে এত কম সময়ের মধ্যে বুথ স্তরের আধিকারিকেরা (বিএলও) পৌঁছোবেন? কী কারণে কমিশন এসআইআর নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করছে, জানি না।’’
সিব্বল আরও জানান, এসআইআর কোনও প্রতিযোগিতামূলক অনুশীলন হওয়া উচিত নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা দেখছি কমিশন এসআইআর-কে প্রতিযোগিতামূলক অনুশীলনে পরিণত করেছে। আমাদের মনে হয়, এটা এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব নয়। বাংলার অবস্থা আরও খারাপ। অনেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিকমতো নেই।’’
আরও পড়ুন:
বিচারপতি সূর্য কান্ত মামলাকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা এই ব্যবস্থাকে এমন ভাবে দেখাচ্ছেন, যেন প্রথম বার ভোটার তালিকা তৈরি হচ্ছে।’’ আদালতের প্রশ্ন, ‘‘এসআইআর নিয়ে এত ভয় পাচ্ছেন কেন? ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ কমিশনকে তো করতেই হবে। যদি তার পরে কোনও ক্রটি থাকে, তবে তা ঠিক করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’’
বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘তথ্যের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভোটার তালিকার তথ্য জনসমক্ষে না এনে, তা ব্যক্তিগত রাখা উচিত।’’ শেষে বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ বলে, ‘‘আমরা নোটিস জারি করছি। আপনারা (মামলাকারী) পাল্টা হলফনামা দাখিল করুন। আমরা যদি সন্তুষ্ট হই, তবে আমরা এই প্রক্রিয়া বাতিল করব।’’ পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, শীর্ষ আদালতে শুনানি চলাকালীন এসআইআর নিয়ে কোনও মামলা কোনও হাই কোর্ট শুনতে পারবে না। যদি কারও কিছু বলার থাকে তবে সুপ্রিম কোর্টে এসে বলুন। পরবর্তী শুনানি ২৬ নভেম্বর।