মধ্যস্থতার মাধ্যমে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিবাদ মেটানোর পক্ষে সওয়াল করল সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
বাবর কী করেছিলেন, তা এখন আর পাল্টানো যাবে না। সে সময় মন্দির ছিল না মসজিদ, তা-ও এখন বদলানো সম্ভব নয়। কারণ অতীতের উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে মস্তিষ্ক ও মনের ক্ষতে মলম দেওয়া সম্ভব।
এই নীতি মেনেই মধ্যস্থতার মাধ্যমে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিবাদ মেটানোর পক্ষে সওয়াল করল সুপ্রিম কোর্ট। আজ রায় ঘোষণা না হলেও প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছে, ‘‘এখানে শুধু সম্পত্তির বিবাদ নয়। সম্ভব হলে, মস্তিষ্ক, হৃদয় ও ক্ষত নিরাময়ের বিষয়।’’
উত্তরপ্রদেশ সরকার অবশ্য মধ্যস্থতার বিরোধিতা করেছে। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মতো মুসলিম পক্ষ, হিন্দুদের মধ্যে নির্মোহী আখড়া রাজি থাকলেও, হিন্দু মহাসভা এর বিরোধিতা করে যুক্তি দিয়েছে, এটা শুধু মামলাকারী দু’পক্ষের বিষয় নয়। দুই সম্প্রদায়ের সমস্যা। আমজনতা এই মধ্যস্থতা মানবে না।
অযোধ্যায় সমঝোতার উদ্যোগ
• চন্দ্রশেখর ও নরসিংহ রাওয়ের সময়ে আলোচনায় অযোধ্যা বিতর্ক মেটানোর চেষ্টা বারবার ব্যর্থ।
• ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টায় ফল মেলেনি।
• ২০১০-এর অগস্টে মধ্যস্থতায় গুরুত্ব দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। আপত্তি তোলেন হিন্দু মামলাকারীরা।
• ২০১৭-এর মার্চে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর নিজেই মধ্যস্থতা করতে চান। তবে তা এগোয়নি।
• ২০১৯-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি: শুনানি পিছিয়ে মধ্যস্থতার রাস্তা খুলে দেয় শীর্ষ আদালত।
আপত্তি উঠেছে খোদ অযোধ্যায় বিরাজমান রামলালা-র তরফ থেকে। রামলালার আইনজীবী বলেন, ‘‘রামের জন্মস্থানেই মন্দির তৈরি করতে হবে। রাম যে অযোধ্যাতেই জন্ম নিয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও বিবাদ নেই। বিবাদ হল, সেই জন্মস্থান ঠিক কোথায়? রামের জন্মস্থান নিয়ে কোনও মধ্যস্থতা হতে পারে না।’’
অযোধ্যা বিবাদে এর আগেও মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে আপত্তি ওঠায় বিচারপতি বোবদে বলেন, ‘‘আমাদের ইতিহাস বোঝাবেন না। আমরাও ইতিহাস জানি। অতীতের উপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। কে হানা দিয়েছিল, বাবর কী করেছিলেন, কে সে সময় রাজা ছিলেন, সেখানে মসজিদ ছিল না মন্দির, তার উপরে আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।’’
আদালতে দু’পক্ষের মধ্যস্থতা দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মানবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কী ভাবে মধ্যস্থতা লক্ষ লক্ষ মানুষের উপরে চাপিয়ে দেব? এটা ততখানি সরল হবে না।’’ কিন্তু বিচারপতি বোবদে বলেন, ‘‘যখন এক পক্ষ একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছে, তা আদালতের লড়াই হোক বা মধ্যস্থতা, তা মানতেই হবে।’’
শুনানির পরে স্বামী চক্রপাণির নেতৃত্বাধীন হিন্দু মহাসভা বলেছে, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর, দীপক মিশ্র ও প্রাক্তন বিচারপতি এ কে পট্টনায়ককে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করা হোক। নির্মোহী আখড়া চায়, প্রাক্তন বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ, এ কে পট্টনায়ক ও জি এস সিঙ্ঘভিকে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দেওয়া হোক।
মধ্যস্থতায় রাজি হলেও মুসলিম পক্ষের আইনজীবী রাজীব ধওয়ান দাবি তোলেন, মধ্যস্থতা গোপন রাখতে হবে। তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করা চলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy