সব নারীরই, তবে বিশেষ করে হিন্দু নারীদের তাঁদের সম্পত্তির ব্যাপারে উইল বা ইচ্ছাপত্র রেখে যাওয়া উচিত বলে মত দিল সুপ্রিম কোর্ট। যে সব নারীর সন্তান নেই, মৃত্যুর পরে তাঁর সম্পত্তি ঘিরে যাতে বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ির পরিবারের মধ্যে সংঘাত না বাধে, তার আগাম ব্যবস্থা রাখার স্বার্থেই সুপ্রিম কোর্ট বুধবার এ কথা বলেছে।
বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, “আমরা দেশের সব নারীকে এবং বিশেষ করে সকল বয়সের হিন্দু নারীকে— যাঁরা হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬–এর ধারা ১৫(১)-র আওতায় পড়েন— তাঁদের উইল বা ইচ্ছাপত্র তৈরি করার জন্য অনুরোধ করছি। যাতে তাঁরা তাঁদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি এবং স্বোপার্জিত সম্পত্তি হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের ধারা ৩০ এবং ভারতীয় উত্তরাধিকার আইনের বিধান অনুযায়ী ইচ্ছামতো বণ্টনের ব্যবস্থা করতে পারেন। এর মাধ্যমে আমরা দেশের সকল নারীর স্বার্থ কেবল নয়, বিশেষ করে হিন্দু নারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাই, যাতে ভবিষ্যতে এ নিয়ে আর কোনও মামলা-মোকদ্দমারসৃষ্টি না হয়।”
শীর্ষ আদালতের কাছে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬–এর ধারা ১৫(১)(খ)–এর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। বিচারপতিরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি, বরং প্রশ্নটিখোলা রেখেছেন। আইনের ওই ধারায় কোনও হিন্দু নারীর যদি স্বামী-সন্তান বিদ্যমান না থাকে এবং উইল না করেই তিনি মারা যান, তা হলে তাঁর সম্পত্তি প্রথমে স্বামীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে। যদি স্বামীর কোনও উত্তরাধিকারী না থাকে, তবেই ওই নারীর বাবা–মা তাঁর সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেতে পারেন। জনস্বার্থ আবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে, এই ধারা সংবিধানের ১৪ ও ২১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। যুক্তি ছিল যে, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের ধারা ১৫(২) নারীর পিতামাতা বা স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্তসম্পত্তির জন্য আলাদা নিয়ম রেখেছে। কিন্তু এটা বিবেচনা করা হয়নি যে, কোনও নারীর স্বোপার্জিত সম্পত্তিও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে নারীর পিতামাতাকে সম্পত্তির অগ্রাধিকার দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে এই জনস্বার্থ মামলায়।
তবে আদালতের নির্দেশ, কোনও হিন্দু নারী উইল ছাড়া মারা গেলে এবং তাঁর বাবা–মা অথবা তাঁদের উত্তরাধিকারীরা সম্পত্তির দাবি করলে, আদালতে মামলা দায়েরের আগে অবশ্যই মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মধ্যস্থতায় যে সমঝোতা হবে, সেটিকে আদালতের ডিক্রি বা আদেশ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)