হোক না সুষমা স্বরাজের ফাঁকা মাঠে গোল। হোক না বিরোধীশূন্য লোকসভায় সাফাই দিয়ে বলা, ললিত মোদী নন, মানবিকতার স্বার্থে তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে সাহায্য করেছেন। হোক না সংসদের ভিতরেই সনিয়া গাঁধীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলা, আমার জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন? মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেন?
রাজনীতির মাঠে বিদেশমন্ত্রীর সামনে ফাঁকা গোলপোস্ট রাখেনি কংগ্রেস। উল্টে কংগ্রেস নেতারা বলছেন, সুষমা গোল করবেন কি, উনি নিজেই ‘লাল কার্ড’ দেখে বসে রয়েছেন। হোক না আজ সংসদের বাইরে ধর্না মঞ্চে সনিয়া নাগা চুক্তি নিয়েই সরব হয়েছেন। কিন্তু সেই অছিলাতেও আরও এক বার মোদী সরকারের ‘ঔদ্ধত্য’ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। আর কাল সাংসদদের সাসপেন্ডের মেয়াদ শেষের পর সোমবার থেকে ফের তেড়েফুঁড়ে নামছে কংগ্রেস।
‘গ্রহের দশা’র কথা বলে, ‘রামচরিতমানস’ আউড়ে, ‘অসুস্থকে সাহায্য করা যদি অপরাধ, তা হলে আমি অপরাধ করেছি, তার জন্য সাজা ভুগতেও রাজি’— বলিউডের পুরনো সংলাপের আশ্রয় নিয়ে সুষমা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুবর্ণ সুযোগটি কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি। কুড়ি মিনিটের নিখুঁত বুনোটে বিদেশমন্ত্রীর আবেগঘন বক্তৃতার প্যাকেজটির সারমর্মই হল, তিনি ললিত মোদীকে সফরের ছাড়পত্র দেওয়ার কোনও অনুরোধ বা সুপারিশ ব্রিটিশ সরকারকে করেননি। যেটি বলেছেন, এর জন্য দু’দেশের সম্পর্কে ফারাক পড়বে না। কিন্তু ছাড়পত্র নিজেদের আইন মোতাবেক দিয়েছে ব্রিটিশ সরকারই।
কিন্তু ফাঁকা মাঠে সুষমাকে দিয়ে এই প্রত্যাশিত সাফাইটি আজ বিজেপি দিল ‘ভাবমূর্তির লড়াই’-এ একধাপ এগিয়ে থাকতে। যাতে সোমবার থেকে কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীরা লোকসভায় এসে হইচই করার আগেই সনিয়ার দিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জটি ছুড়ে দিয়ে রাখতে পারেন সুষমা। যাতে সংসদে এসে আর ইস্তফার দবি নয়, আলোচনা হোক সুষমার সাফাইয়ের উপরেই। কিন্তু সংসদে এসে আলোচনায় সামিল হওয়ার থেকে হট্টগোল করা আর বাইরে হুঙ্কার ছাড়লেই বেশি লাভ কংগ্রেসের। তাই টেলিভিশনের পর্দায় সুষমার বক্তব্যের ফাঁকফোকরগুলিও নিমেষে জরিপ করে ফেলেছেন কংগ্রেস নেতারা।
আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘বিদেশমন্ত্রীর বিবৃতি শুধু খারিজ করছি না, ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলতে চাইছি।’’ কেন? ‘‘মানবিকতার যুক্তি খাটছে কোথায়? লিবিয়ায় আটকে পড়া কোনও ভারতীয়কে সাহায্য করলে যে বিদেশমন্ত্রী টুইট করে দুনিয়াকে জানাতে খামতি রাখেন না, তিনি কেন লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ও বিদেশ সচিব আর প্রধানমন্ত্রীর থেকে ব্যাপারটি গোপন করেছিলেন? মানবিকতা এত গোপনে কেন? বিদেশমন্ত্রীর কীসের এত স্বার্থ?’’ প্রশ্ন কংগ্রেসের।
এর পরেই একগুচ্ছ ছবি সামনে নিয়ে আসে কংগ্রেস। ভেনিস, ব্যাঙ্কক, মন্টিনেগ্রোতে মোদী ও তাঁর স্ত্রীর ঘুরে বেড়ানোর ছবি। সেই ছাড়পত্র পাওয়ার পরের ছবি সব। কংগ্রেসের অভিযোগ, ব্রিটিশ সরকার এক বার মোদীর ভিসা আবেদন খারিজ করেছিল। তার পর সুষমার সুপারিশের ভিত্তিতেই তাঁকে ভিসা দেয়। অথচ মজার ব্যাপার হল, ললিত মোদী ভিসার আবেদনে যে কারণ দেখিয়েছিল সেই তালিকায় প্রথমে ছিল, সেসলসের রাষ্ট্রপতি নিমন্ত্রণ, বোনের বিয়ে এবং শেষ কারণ হিসাবে স্ত্রীর চিকিৎসা। দেখা যায়, ভিসা পাওয়ার দু’দিন পর স্পেনের বিলাসবহুল রিসর্টে সস্ত্রীক ছুটি কাটাচ্ছেন মোদী। কংগ্রেস বুঝিয়ে দেয়, স্ত্রীর ছুটি কাটানোটি আদৌ গুরুতর ছিল না। ব্রিটিশ ভিসা পাইয়ে দেওয়ার বদলে সুষমা ভারতের ভিসার ব্যবস্থা করতে পারতেন।
আর বিজেপি কী বলছে? তাদের কথা, ভাল তো। কংগ্রেস এই প্রশ্নগুলিই সংসদে এসে করুক। বিদেশমন্ত্রী আবার জবাব দেবেন। কিন্তু সে কথা শুনছে কে?