Advertisement
E-Paper

বিরোধী সমর্থনে আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়াল কংগ্রেস

রাতভর বৃষ্টির পরেও সংসদের উত্তাপ কমল কই! বরং প্রতিবাদের মঞ্চে আজ আরও বন্ধু জুটল কংগ্রেসের। কংগ্রেসের পঁচিশ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার বিরোধিতা করলেও কাল তবু দূরে দূরে ছিলেন বাম ও সংযুক্ত জনতা নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ১১:১৮
সংসদ ভবনের সামনে বিরোধীদের ধর্না।—নিজস্ব চিত্র।

সংসদ ভবনের সামনে বিরোধীদের ধর্না।—নিজস্ব চিত্র।

রাতভর বৃষ্টির পরেও সংসদের উত্তাপ কমল কই! বরং প্রতিবাদের মঞ্চে আজ আরও বন্ধু জুটল কংগ্রেসের। কংগ্রেসের পঁচিশ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার বিরোধিতা করলেও কাল তবু দূরে দূরে ছিলেন বাম ও সংযুক্ত জনতা নেতারা। আজ তাঁরা খোলাখুলিই গিয়ে দাঁড়ালেন সনিয়া গাঁধীর পাশে! আর সেই বর্ধিত সমর্থনের অক্সিজেন পেয়ে কংগ্রেস সভানেত্রীও যেন আক্রমণের তেজ চড়িয়ে দিলেন এক দাগ! বললেন, বিরোধিতা এখনও কী দেখেছে সরকার, আরও আগুন জ্বলবে!

খোদ সনিয়ারই যদি এমন মেজাজ হয়, তারপরেও গুটিয়ে থাকতে পারে দল! বরং কংগ্রেসে তার সংক্রমণ কী ভাবে ঘটছে তার নমুনাও আজ দেখা গেছে লুটিয়েন দিল্লিতে। সংসদের উঠোনে ধর্নায় বসে কংগ্রেস সাংসদেরা যখন সরকার বিরোধী উগ্র স্লোগান দেন, তখন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধান যুব কংগ্রেস সমর্থকরা। খোদ যুব কংগ্রেস সভাপতি অমরেন্দ্র সিংহ রাজা ব্রার ব্যারিকেড ভাঙতে নামেন! শেষ পর্যন্ত জলকামানে কাক ভেজা পঞ্জাবের এই যুব নেতাকে টেনেহিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যেতে হয় পুলিশকে। গত দেড় দশকে যুব কংগ্রেসের কোনও সভাপতিকে এই প্রথম দেখা গেল এমন আগ্রাসী ভূমিকায়। দলে যা ইতিবাচক পরিবর্তন বলেই মনে করছেন শীর্ষ নেতারা।

আসলে সনিয়া-রাহুলও এটাই চাইছেন। মোদী সরকার তথা বিজেপি-র দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ ভাবেই আন্দোলনমুখী হোক কংগ্রেস। যাতে জমির রাজনীতিতে বিজেপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ক্রমশ মজবুত করা যায় আর তার মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রায় খুইয়ে ফেলা প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পায় কংগ্রেস। আবার সংসদ চালাতে গিয়েও যেন হোঁচট খায় সরকার। সুষমা-বসুন্ধরার দুর্নীতি ও কংগ্রেস সাংসদদের সাসপেন্ড করার বিরুদ্ধে অন্য বিরোধী দলগুলিও যে রকম সন্মিলিত ভাবে এখন সরকারের সমালোচনা করছে, তাতে শাসক দল চাপে তো পড়ছেই। কিন্তু তার থেকেও বড় ব্যাপার হল, সংসদে আর্থিক সংস্কারের সব কর্মসূচি ও বিল পাশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ইউপিএ জমানায় এ ভাবে সংসদ অচল রেখে সংস্কারে বাধা তৈরি করেছিল বিজেপি, সেই সঙ্গে নীতি পঙ্গুতার লেবেল সেঁটেছিল মনমোহন সরকারের ওপর। এ বার ওঁদেরও ঠ্যালা বুঝতে হবে!

সংসদ অচল থাকায় সরকার যে তলে তলে উদ্বিগ্ন সে ব্যাপারটা এখন পরিষ্কার। কারণ, একে তো জমি বিল সংশোধন করতে গিয়ে হাত পুড়িয়েছে বিজেপি। এখন যা অবস্থা তাতে পণ্য পরিষেবা কর বিল ও তা বাস্তবায়নের রোড ম্যাপও ভেস্তে যেতে চলেছে। কিন্তু রাজনীতি বড় বালাই। দোরগোড়ায় বিহার ভোট। তার আগে দুর্নীতি প্রশ্নে বা অন্য বিষয়ে ঢোক না গেলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অমিত শাহ-অরুণ জেটলিরা। তাই আজও সাহসী মুখ দেখিয়ে রাজীবপ্রতাপ রুডি-সহ বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা বলেন, কংগ্রেসের উচিত সংসদে ফিরে আসা। স্পিকারের কাছে কংগ্রেস লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইলেই ল্যাঠা চুকে যায়।

কিন্তু কংগ্রেস কার্যত বোঝাতে চাইছে, ল্যাঠা কে চোকাতে চায়? গতকালই রাজনৈতিক একটি সূত্রে রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, স্পিকার কংগ্রেসের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন যে তাদের সাংসদেরা মুচলেকা দিলে তিনি বরখাস্তের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। আজ সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সনিয়া বুঝিয়ে দেন, ক্ষমা চাওয়া বা মুচলেকার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ কোনও প্রস্তাব দেয়নি, কালও ধর্না চলবে।’’

মজার ব্যাপার হল, গতকাল সনিয়া-রাহুল ধর্না দেওয়ার পর দলের কিছু শীর্ষ নেতা তাঁদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, আজ আর মা-ছেলেকে বিক্ষোভ মঞ্চে না এলেও চলবে। বাকি সাংসদরা ধর্না দিক। কারণ, রোজ রোজ তাঁরা ধর্নায় বসলে গুরুত্ব কমে যাবে ও ব্যাপারটা জোলো হয়ে যাবে। কিন্তু মা-ছেলে উভয়েই সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। তা ছাড়া কংগ্রেস সভানেত্রীর কাছেও পরিষ্কার, ব্যক্তিগত ভাবে তিনি উপস্থিত না থাকলে অন্য বিরোধী দলের নেতা-সাংসদেরা সেখানে আসবেন না। সূত্রের খবর, কাল সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংহকে ধর্না মঞ্চে উপস্থিত করানোর চেষ্টা করছে কংগ্রেস। সন্দেহ নেই, বাস্তবে তা হলে আরও চাপ বাড়বে সরকারের উপর।

তবে এর পরেও আজ স্পিকারের বাসভবনের সামনে কংগ্রেসের বিক্ষোভ নিয়ে রাহুল গাঁধীকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। স্পিকারের পদ নিরপেক্ষ? তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখানো রাজনৈতিক ভাবে কতটা ঠিক? রাহুল অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘স্পিকারের সিদ্ধান্ত আমাদের পছন্দ হয়নি ঠিকই, কিন্তু ওনার পদকে মর্যাদা করি।’’ কিন্তু পরে দলের এক নেতা বলেন, স্পিকারের সিদ্ধান্তের নেপথ্যেও সরকার তথা শাসক দল রয়েছে। তাই তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে সরকারের বিরুদ্ধেই বার্তা দিতে চেয়েছে যুব কংগ্রেস।

congress bjp parliament Sumitra Mahajan loksava sonia gandhi rahul gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy