ক্ষমতায় আসার পরে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের উপর বরাবর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘর-বাড়ি ও তার আশপাশের এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও প্রচার চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু দেশের রাজধানীর একাংশই এখন আবর্জনার স্তূপে ভরে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে আজ সকালে অন্তত ১৫ জন স্কুটার বা বাইক নিয়ে আবর্জনায় পিছলে পড়ে গিয়েছেন।
আসলে গত কাল থেকে পুরসভার ১২ হাজার সাফাইকর্মী কর্মবিরিতি শুরু করেছেন পূর্ব দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকায়। ফলে কাল থেকে ওই এলাকার জঞ্জাল সরানো হচ্ছে না। রাস্তায় উপচে পড়ছে আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধে এলাকাবাসীদের ঘুম ছুটেছে। কিন্তু সাফাইকর্মীরা অনড়। গত কয়েক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তাঁরা। তাই তাঁদের বক্তব্য, যত ক্ষণ না পর্যন্ত তাঁরা মাইনে পাচ্ছেন, রাস্তা থেকে আবর্জনা সরানোর প্রশ্নই নেই। দিল্লি প্রদেশ সাফাই কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রাজেন্দ্র মেওয়াতি বলেন, “পুরসভা মাস কয়েক ধরে আমাদের মাইনে দিচ্ছে না। তাই আমরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” যে সব এলাকা এই কর্মবিরতির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়ার কেন্দ্র প্রতাপগঞ্জ। তা ছাড়া, মঙ্গলম, লক্ষ্মীনগর, কারকারডুমা, বিকাশ মার্গ, জগতপুরি, এবং উত্তর দিল্লির কিছু এলাকার ছবিটাও এক।
আজই চোখের সামনে অনেকগুলি দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছেন অখিলেশ নামে এক পান বিক্রেতা। তিনি বলেন, “আবর্জনায় পিছলে অন্তত ১৫ জন বাইক আর স্কুটার আরোহী রাস্তায় পড়ে গিয়েছেন আজ। সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে এ ভাবে ছেলেখেলা করাটা উচিত নয়। রাস্তায় যত্রতত্র নোংরা পড়ে রয়েছে। বোতল, প্লাস্টিক, পেরেক, লোহার ছাঁট।” এলাকাবাসীরাও সাফাইকর্মীদের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। “দশ বছর ধরে এলাকায় রয়েছি। কিন্তু এই প্রথম এ রকম হতে দেখলাম। যেখানে থাকি, সেখান পর্যন্ত হয়তো দুর্গন্ধ যাচ্ছে না। কিন্তু রাস্তায় হাঁটাচলা করাও তো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করছি, সরকার বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছবে”, বললেন গৌরব গুজরাল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা।
পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তা কার্যত মেনে নিয়েছেন পুরসভার মুখপাত্র যোগেন্দ্র মান। তাঁর কথায়, “ফেব্রুয়ারি থেকে সাফাই কর্মীদের মাইনে দেওয়া হয়নি। তহবিলে টাকা আসলেই আমরা টাকা দিতে শুরু করব।” তিনি জানিয়েছেন, পুরসভা এখন ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সব কর্মীদের বেতন মেটাতেই এখন তাঁদের ৩০০ কোটি টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন মান। এই অবস্থায় কর্মচারী ইউনিয়ন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ও উপ মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়ার বাড়ির সামনে ধর্না দেবে বলে ঠিক করেছে। ইউনিয়নের এক নেতা বলেছেন, “আমাদের দাবি না মেটানো হলে ওঁদের বাড়ির সামনেও আবর্জনা ছড়িয়ে আসতে বাধ্য হব। গরিব মানুষ মাইনে না পেলে চলবে কী করে।”
সাফাই কর্মীরা যে নিরুপায়, তা তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট। এক কর্মী বলেন, “ছ’মাস ধরে স্বচ্ছ ভারত অভিযান চলছে। অথচ তিন মাস আমরা বেতন পাচ্ছি না। অভিযানের জন্য আমাদের ছুটি বাতিল হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করিনি। ভেবেছি, দেশের ভাল হবে। কিন্তু এ সবে লাভ কী? আমরা যারা প্রতি মাসের মাইনের উপর নির্ভর করে সংসার চালাই, তারা পথে বসতে চলেছি। এ ভাবে চললে তো আমাদের পরিবার না খেতে পেয়ে মারা যাবে।”