Advertisement
E-Paper

ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতিতে মার খেতে পারে ভারতীয়দের কোন কোন ব্যবসা? প্রভাব কি ভারতের অর্থনীতিতেও

বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে কম শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। আমেরিকায় পণ্য রফতানির প্রতিযোগিতায় সেই দেশগুলি ভারতকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে এ দেশের রফতানিকারক সংস্থাগুলির একাংশ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৫ ১৭:২৭
ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভারত থেকে রফতানি করা পণ্যে বাড়তি ২৫ শতাংশ কর চাপিয়েছে আমেরিকা। ২৭ অগস্ট থেকে ভারতের রফতানিকৃত পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা জানিয়েছে আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। ভারতীয় রফতানিকারক সংস্থাগুলির সংগঠন বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা এপি-কে জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির কারণে এ দেশ থেকে আমেরিকায় রফতানির ব্যবসার উপরে ৫৫ শতাংশ প্রভাব পড়বে। যে সব দেশ (যাদের উপর কম শুল্ক চাপানো হয়েছে) আমেরিকায় পণ্য রফতানি করে, তাদের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় নামতে হবে ভারতকে। অনেক ক্ষেত্রে সেই দেশগুলি বাড়তি সুবিধা পাবে। মার খাবে বেশ কিছু পণ্যের রফতানি।

ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এসসি রালহান বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এই বর্ধিত শুল্ক মেনে নেওয়া কঠিন। আমেরিকা ভারতের থেকে দামি জহরত, গয়না, কাপড়, সামুদ্রিক মাছ, গাড়ির যন্ত্রাংশ কেনে। সেই ব্যবসাই এ বার ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা বণিকমহলের। বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে কম শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। আমেরিকায় পণ্য রফতানির প্রতিযোগিতায় সেই দেশগুলি ভারতকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে এ দেশের রফতানিকারক সংস্থাগুলির একাংশ। আমেরিকার সেনসাস ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে আমেরিকা ভারতে যত পণ্য রফতানি করেছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি পণ্য আমদানি করেছে। অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যের ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৫৮ কোটি আমেরিকান ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় চার লক্ষ কোটি টাকা। এ বার নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হলে সেই ঘাটতি মিটিয়ে ফেলতে পারে আমেরিকা। ২৭ অগস্ট থেকে এই নীতি কার্যকর হওয়ার কথা।

স্বস্তিকা ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি বিনিয়োগকারী সংস্থার গবেষণা বিভাগের প্রধান সন্তোষ মিনা সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে জানিয়েছেন, ট্রাম্প যে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন, তা অপ্রত্যাশিত। মিনা জানিয়েছেন, শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ার আগে এখনও আলোচনার সময় রয়েছে। ২৪ অগস্ট আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের এ দেশে আসার কথা। এই পদক্ষেপকে ট্রাম্পের ‘আগ্রাসী কৌশল’ বলেও বর্ণনা করেছেন মিনা। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের অর্থনীতিকে টেনে নিয়ে যায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা। তার সঙ্গে সরাসরি আমেরিকার কোনও যোগ নেই, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, বৈদ্যুতিন ক্ষেত্র ছাড়া। তবে আশার কথা, এই তিনটি ক্ষেত্রে নতুন শুল্ক তালিকায় নেই। তবে কাপড়, জহরত, গয়না, চামড়ার ব্যবসা চাপে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মিনা।

কোন কোন ব্যবসায় প্রভাব পড়বে?

সামুদ্রিক মাছ

ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হলে সবচেয়ে বেশি মার খাবে ভারতের সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণীর ব্যবসা। ভারত যত সামুদ্রিক মাছ (সিফুড) রফতানি করে, তার ৪০ শতাংশই যায় আমেরিকায়। প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার সামুদ্রিক মাছ সে দেশে রফতানি করে ভারত। সবচেয়ে বেশি রফতানি করে চিংড়ি। ভারতের সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী রফতানিকারক সংস্থার সভাপতি পবন কুমার জি জানিয়েছেন, এই শুল্কনীতির প্রভাব ব্যবসার পাশাপাশি মৎস্যজীবী, কৃষকদের উপরেও পড়বে।

কাপড়

নয়ডা, সুরত, তিরুপ্পুরের কাপড় রফতানিকারক সংস্থাগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমেরিকায় রফতানির জন্য কাপড় তৈরি আপাতত স্থগিত রাখবে। তিরুপ্পুর বস্ত্র রফতানি সংগঠনের চেয়ারম্যান শক্তিভেল ‘ইকোনমিক টাইম্‌স’কে জানিয়েছেন, নতুন এই শুল্কনীতির প্রভাব ব্যবসার উপরে পড়বে, যত ক্ষণ না ভারত আমেরিকার সঙ্গে অনুকূল কোনও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করবে। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির (সিআইটিআই) সভাপতি সঞ্জয় জৈন জানিয়েছেন, নতুন বরাত আপাতত আসবে না। পুরনো বরাতের পণ্য ক্ষতির মুখে পড়েই রফতানি করতে হবে। আমেরিকার বিশাল বাজারে কাপড় রফতানিতে সুবিধা করে নেবে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম— তেমনটাই মনে করছে এ দেশের বস্ত্র উৎপাদনের সংগঠনগুলি।

জহরত, গয়না

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আমেরিকায় ৮৩ হাজার কোটি টাকার জহরত এবং পাথর বসানো গয়না রফতানি করেছে ভারত। এ দেশের জহরত কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাজার হল আমেরিকা। জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কিরীট ভন্সালী জানিয়েছেন, আমেরিকার পরিবর্তে বিকল্প দেশে জহরত রফতানির পথ দেখবে ভারত। তাদের নজরে রয়েছে দুবাই, মেক্সিকো।

গাড়ির যন্ত্রাংশ

ভারত যত পরিমাণ গাড়ির যন্ত্রাংশ রফতানি করে বিভিন্ন দেশে, তার অর্ধেকই যায় আমেরিকায়। প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকার যন্ত্রাংশ রফতানি করা হয়। তবে গাড়ি রফতানি তারা করে না। ওই ক্ষেত্রের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, নতুন শুল্কনীতির কারণে অর্ধেক রফতানি মার খাবে।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শুল্কনীতির প্রভাব পড়বে ভারতের এ সব ক্ষেত্রের কর্মী নিয়োগেও। যে সব পণ্য রফতানি করা হত আমেরিকায়, সেগুলির ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলে ছাঁটাই হতে পারেন কর্মী। পরোক্ষে প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও।

US Tariff War Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy