রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাঁদের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ সবে শেষ হয়েছে। ওই যাত্রাই তাঁদের ভোট-প্রস্তুতির কাজ অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধী নেতারা। এ বার বিধানসভা ভোট ঘোষণার আগে বিহারে আর এক প্রস্ত জনসংযোগ যাত্রায় বেরোতে চাইছেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ বিহারের যে সব অংশে যেতে পারেনি, সেই সব জেলায় ভোটারদের কাছে পৌঁছতে চাইছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
বিহারের শাসক ফ্রন্ট এনডিএ অবশ্য বিরোধীদের এমন যাত্রা ও রোড-শো’র মোকাবিলায় বুথ স্তরের সম্মেলনের উপরে জোর দিচ্ছে। বিজেপি এবং জেডিইউ নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা কেন্দ্র এলাকাতেই বুথ ধরে ধরে এনডিএ-র নামে কর্মী সম্মেলন হবে। তার প্রাথমিক পর্ব শুরুও হয়ে গিয়েছে। শাসক নেতৃত্বের লক্ষ্য, একেবারে বুথ স্তরে শরিকি ঐক্য রেখে সরকারের পক্ষে প্রচারকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
কংগ্রেস, আরজেডি-সহ ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক বিভিন্ন দলকে নিয়ে রাহুল, তেজস্বীদের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ বিহারের সাসারাম থেকে শুরু হয়ে ২৫টি জেলায় ১১০টির বেশি বিধানসভা এলাকা ছুঁয়ে পটনায় এসে শেষ হয়েছিল। আরজেডি শিবিরের এখন পরিকল্পনা, রাজ্যের বাকি ১৩টা জেলায় তেজস্বীর নেতৃত্বে আরও একটা যাত্রা করা। তার মধ্যে অরওয়াল, জেহনাবাদ, বক্সার, কৈমুর, কিসানগঞ্জ, বেগুসরাই, খগাড়িয়ার মতো জেলায় গত বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি ভাল ফল করেছিল, বিরোধীদের ‘মহাগঠবন্ধন’ও ভোট পেয়েছিল ভাল। ছট পুজোর আগেই ওই সব এলাকায় তেজস্বীকে রেখে যাত্রা সেরে নিতে চাইছে আরজেডি।
নিজেদের কৌশল ঠিক করার পাশাপাশিই এলাকায় এনডিএ-র নেতা-কর্মীরা এলে তাঁদের প্রশ্ন করার জন্য রাজ্যবাসীকে আবেদন জানাচ্ছেন তেজস্বী। দলের তরফে ভোটারদের উদ্দেশে বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘‘বিহারে কেন ভাল রোজগার নেই? কেন এত মানুষকে অন্য রাজ্যে কাজে যেতে হয়? অপরাধের মাত্রা এত বেশি কেন? মহিলারা কেন সুরক্ষিত নন? কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে? দুর্নীতি রুখতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এই প্রশ্নগুলো শাসক জোটের নেতাদের করুন, যখন তাঁরা আপনাদের এলাকায় আসবেন।’’ প্রসঙ্গত, বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এই বিষয়গুলিকেই হাতিয়ার করছে আরজেডি।
শাসক ফ্রন্টের তরফে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ জায়সওয়াল অবশ্য পাল্টা বলছেন, ‘‘বিরোধীরা যা করছে, তার সবই চমক আর নাটক! ভোট নাটক দিয়ে হয় না। আমরা সেই জন্য বুথভিত্তিক সম্মেলন করছি। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিহারের প্রতিটা জেলার জন্য কিছু না কিছু প্রকল্প ঘোষণা করেছেন, তার সুফল মানুষ পাবেন। বিরোধীরা যা-ই বলুক, উন্নয়নের কথাই আমরা মানুষের কাছে গিয়ে বলব।’’ জেডিইউ-এর রাজ্য সভাপতি উমেশ সিংহ কুশওয়াহার দাবি, এনডিএ-র বুথ সম্মেলনে তৃণমূল স্তরে কর্মীদের ঐক্য মজবুত হচ্ছে।
আসন-রফার প্রশ্নে এনডিএ যখন অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, চাপ বাড়াতে শুরু করেছে বিরোধীদের ‘মহাজোটে’র শরিকেরাও। পটনায় শুরু হয়েছে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্মেলন। সেই অবসরেই সিপিআই দাবি তুলেছে, গত বারের অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে এ বার ‘সম্মানজনক’ সংখ্যায় আসন তাদের দিতে হবে। হেমন্ত সরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ( জেএমএম) এবং রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টি (আরএলজেপি), এই দুই দলও এ বার ‘ইন্ডিয়া’র শরিক হয়ে বিহারে লড়তে চাইছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)