জ়ুবিন গর্গের মৃত্যুর পরে সিঙ্গাপুর সরকার যে ডিজ়িটাল ময়না তদন্ত করেছিল, তার রিপোর্ট জ়ুবিনের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবার তা সিআইডিকে দেয়নি। সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানালেন সিআইডির বিশেষ তদন্ত দলের নেতৃত্বে থাকা বিশেষ ডিজিপি গুপ্তা প্রসাদ গুপ্তা।
অসম সরকার গুয়াহাটিতে জ়ুবিনের দ্বিতীয় যে ময়না তদন্ত করেছে, তার প্রাথমিক রিপোর্ট সিআইডি জ়ুবিনের স্ত্রী গরিমা শইকিয়া গর্গের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু গরিমা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি রিপোর্ট ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ, দু’টি ময়না তদন্তের রিপোর্টে মিল আছে কি না, হত্যার সম্ভাবনার উল্লেখ রয়েছে কি না, তা সিআইডি এবং গরিমা জানলেও তা প্রকাশ করা হচ্ছে না।
এ দিকে, সঙ্গী বাদ্যযন্ত্রী শেখরজ্যোতি গোস্বামীর বক্তব্য থেকে জ়ুবিনের দেহে বিষক্রিয়ার সন্দেহও করা হচ্ছিল। তাঁর ভিসেরা রিপোর্ট দিল্লি থেকে এসেছে সিআইডির হাতে। কিন্তু গুপ্তা বলেন, “ভিসেরা রিপোর্ট গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার বিশেষজ্ঞ কমিটি রিপোর্টটি পরীক্ষা করে চূড়ান্ত ময়না তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করবে। এর পর আমরা সেই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেব এবং প্রতিলিপি পরিবারকে দেওয়া হবে। তার আগে রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না।”
এখনও পর্যন্ত এসআইটি মোট সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁরা হলেন, জ়ুবিনের তুতো ভাই ও ডিএসপি সন্দীপন গর্গ, ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, উত্তর-পূর্ব উৎসবের আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত, সহ-শিল্পী শেখরজ্যোতি গোস্বামী ও অমৃতপ্রভা মহন্ত এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নন্দেশ্বর বরা ও পরেশ বৈশ্য। সিদ্ধার্থ, শেখরদের মুখোমুখি জেরায় জ়ুবিনের সঙ্গে বেশ কিছু মতানৈক্য থাকার কথা জানা গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু সেই সবের সঙ্গে মৃত্যুর প্রত্যক্ষ যোগ প্রমাণিত হয়নি।
এ দিকে, শ্যামকানু, সিদ্ধার্থ, শেখরজ্যোতিদের আদালত ১৪ দিনের সিআইডি হেফাজত দিয়েছিল, যা সর্বোচ্চ মেয়াদ। এর পর তাঁদের জেলে রাখা হবে। শ্যামকানু, সিদ্ধার্থেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন— যেমন জনরোষ তৈরি হয়েছে, তাতে জেলে তাঁদের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকবে।সে ক্ষেত্রে তাঁদের কোথায়, কী ভাবে রাখা হবে সেই প্রশ্নের জবাবে গুপ্ত জানান, এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন ইয়টে থাকা ১১ জন প্রবাসী অসমিয়াকে নোটিস পাঠানো হলেও রূপকমল কলিতা বাদে কেউ আসেননি। তাই বাকি ১০ জনকে ফের সমন পাঠানো হয়েছে। তার পরেও তাঁরা নাএলে আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
সিঙ্গাপুরে গিয়ে তদন্ত না চালানোয় এসআইটি সমালোচনার মুখে পড়েছে। এই বিষয়ে গুপ্তা বলেন, “ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে থাকা পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তির ভিত্তিতে, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, সাক্ষ্য, বয়ান ইত্যাদি চেয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। তারা বর্তমানে আবেদনটি পর্যালোচনা করছে। তাদের অনুমতি ছাড়া আমরা তদন্ত চালাতে পারব না, কারণ তা বেআইনি হবে।” শুক্রবার সন্ধ্যায় জ়ুবিনের শেষকৃত্যস্থলে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফের ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হন গরিমা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)