‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ বাধ্যতামূলক ভাবে স্মার্টফোনে প্রি-ইনস্টল করার সরকারি নির্দেশ ঘিরে বিতর্কের আবহেই এ বার সুর নরম করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বুধবার এ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী নির্দেশ প্রত্যাহারের করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও ওই বিবৃতিতে ফের দাবি করা হয়েছে, অসাধু ব্যক্তিদের নাগাল থেকে গ্রাহকদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই অ্যাপটি চালু করা হয়েছে।
বাজারে চালু থাকা স্মার্টফোনের গ্রাহকদের ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ ডাউনলোড করার ‘পরামর্শ’ দিয়ে সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা দেওয়া ছাড়া অ্যাপটির অন্য কোনও কাজ নেই। সরকার স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে, তাঁরা (গ্রাহকেরা) যখন খুশি অ্যাপটি সরিয়ে ফেলতে পারেন।’’ এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ৪০ লক্ষ ব্যবহারকারী এই অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন এবং প্রতিদিন ২০০০টি জালিয়াতির ঘটনার তথ্য প্রদান করছেন বলেও ওই বিবৃতিতে দাবি। কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতর (ডট) বুধবার জানিয়েছিল, এত দিন সাধারণত দৈনিক ৬০ হাজারের মতো ডাউনলোড হচ্ছিল এই অ্যাপ। বিতর্কের আবহে মঙ্গলবার হঠাৎই তা ১০ গুণ বেড়ে প্রায় ৬ লক্ষে পৌঁছেছে। প্রি-ইনস্টলেশন প্রত্যাহারের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতেও একই দাবি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতে বিক্রি হওয়া সব ফোনে ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপটি প্রি-ইনস্টল করা থাকতে হবে বলে গত ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের তরফে ফোন প্রস্তুতকারী সব সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যে স্মার্টফোনগুলি ইতিমধ্যে বাজারে এসে গিয়েছে, সেগুলিতেও সফ্টঅয়্যার আপডেটের মাধ্যমে ওই সরকারি অ্যাপটি প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার (ইনস্টল করার) কথা বলেছে কেন্দ্র। তার পর থেকেই গ্রাহকদের মোবাইলে ‘সঞ্চার সাথী’ ডাউনলোডের লিংক পৌঁছোচ্ছে প্রতিনিয়ত। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোজীর সরকারের ওই নির্দেশ ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। ওই অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকদের ‘ব্যক্তিগত পরিসরে’ নজরদারি চালানো হবে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মঙ্গলবার ইজ়রায়েলি ‘স্পাইঅয়্যার’ পেগাসাসের সঙ্গে তুলনা টেনে সঞ্চার সাথীকে ‘স্নুপিং অ্যাপ’ বলে চিহ্নিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে ফোন ব্যবহার করা গ্রাহকের গোপনীয়তার সুরক্ষা লঙ্ঘিত হবে। শুধু বিরোধী দল নয়, শিল্প বিশেষজ্ঞদের অনেকের অভিযোগ, এই অ্যাপের মাধ্যমে আদতে সরকারি নজরদারি বাড়তে পারে গ্রাহকদের উপর। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বৈঠক করার বার্তা দিয়েছিল দুই মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাপ্ল এবং স্যামসাং। সেখানে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নির্দেশিকার কিছু বদল হতে পারে বলেও জল্পনা ছিল। কেন্দ্রের নির্দেশে ছিল, আগামী ১০০ দিনের মধ্যে প্রতিটি মোবাইল ফোন নির্মাতা বা আমদানিকারী সংস্থাকে ‘সঞ্চার সাথী’ প্রি-ইনস্টল নিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। কিন্তু অ্যাপ্ল বর্তমান আকারে নির্দেশটির বাস্তবায়ন করতে রাজি নয় বলে সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়ছিল মঙ্গলবার। আপাতত নির্দেশ প্রত্যাহার করে পিছু হটল কেন্দ্র। যার নেপথ্যে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলির ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে মনে করছে শিল্পমহলের একাংশ।