মার্জিত এবং নিয়ন্ত্রিত স্বরে নয়াদিল্লি ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারকে বুঝিয়ে দিল, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের করা দোষারোপ ভাল চোখে দেখা হচ্ছে না।
কিছু দিন আগে ইউনূস অভিযোগ করেছিলেন, বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির পিছনে রয়েছে ভারত। আজ এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়ালের বক্তব্য, “এই বিবৃতি আমরা দেখেছি। বাংলাদেশ সরকারের নিজেদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায়ভার তাদের উপরেই বর্তায়। এমন পরিস্থিতিতে কেউ যদি বলেন বাইরের কোনও শক্তি এই অস্থিরতার জন্য দায়ী, তখন এটাই মনে করতে হবে যে, আসল সমস্যাগুলি থেকে মনোযোগ সরিয়ে অন্যদের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। এই ধরনের বক্তব্য সমস্যার সমাধান করে না।”
গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়েছিলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের কারণে দেশ বড় সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। এ জন্য পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার বলে প্রধান উপদেষ্টা মনে করছেন।’’ সোমবারই বিষয়টি নিয়ে সাউথ ব্লকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তখনকার মতো নিরুত্তর থাকে তারা। বস্তুত বৃহস্পতিবারও টোকিয়োতে ইউনূস অশান্ত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে সাম্প্রতিক ভারত-পাক সংঘর্ষের কথা টেনে এনেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা এক গভীর অনিশ্চিত সময় পার করছি। আমরা এমন একটি বিশ্বকে প্রত্যক্ষ করছি, যেখানে শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে, উত্তেজনা বাড়ছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা সব সময় নিশ্চিত থাকছে না।’’ তার পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘সম্প্রতি আমাদের দুই প্রতিবেশীর মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত, কিন্তু ব্যয়বহুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা কোটি কোটি টাকা যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করছি, অথচ লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে ন্যূনতম চাহিদার জন্য লড়াই করছে।’’ ভারত এ বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বাংলাদেশে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এই সময় এমন কোনও মন্তব্য ভারত করতে চায় না, যা প্রতিবেশী দেশকে আরও অশান্ত করে তোলে। কারণ সীমান্তের নিরাপত্তা পরিস্থিতির সঙ্গে তা সম্পর্কযুক্ত।
বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে এখন রাস্তায় নেমেছে বিএনপি। এই নিয়ে আজ জায়সওয়ালের বক্তব্য, দ্রুত নির্বাচন হলে তা বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহযোগী হবে। সে দেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারের নাগরিক করিডর গড়া নিয়েও সেনাপ্রধান এবং মুখ্য রাজনৈতিক দল তথা জনসাধারণের সঙ্গেও মতবিরোধ চলছে অন্তর্বর্তী সরকারের। জায়সওয়াল সতর্ক ভাবে জানিয়েছেন, “আমরা গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের এই সমস্ত ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)