Advertisement
E-Paper

গাড়ি চুরি চক্রের পাণ্ডা অনিল ধৃত গুয়াহাটিতে

দেশে গাড়ি চুরি চক্রের পাণ্ডা অনিল চৌহানকে গ্রেফতার করল গুয়াহাটি পুলিশ। শুধু উত্তর-পূর্বই নয়, গোটা দেশেই গাড়ি চুরির একাধিক অভিযোগ রয়েছে অনিল ও তার দলের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৬
অনিল চৌহান।—নিজস্ব চিত্র।

অনিল চৌহান।—নিজস্ব চিত্র।

দেশে গাড়ি চুরি চক্রের পাণ্ডা অনিল চৌহানকে গ্রেফতার করল গুয়াহাটি পুলিশ।

শুধু উত্তর-পূর্বই নয়, গোটা দেশেই গাড়ি চুরির একাধিক অভিযোগ রয়েছে অনিল ও তার দলের বিরুদ্ধে। অভিযোগের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, বিহারের পুলিশও অনিলের খোঁজে হন্যে ছিল। গত রাতে শহরের আজারা এলাকা থেকে অনিল ও তার সঙ্গী মামুদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অনিলকে গ্রেফতার করার গুরুত্ব এমনই যে, এ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন খোদ পুলিশ কমিশনার।

ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মুকেশ অগ্রবাল জানান, অনিলের গাড়ি চুরির জাল গোটা দেশে ছড়ানো। মুম্বই, দিল্লির পুলিশের সঙ্গেও তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন। সেখানেও অনিলের নামে ‘লুক আউট’ নোটিস রয়েছে। দু’জনের কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি রিভলভার, ৫ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, ৪টি মোবাইল মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে একটি গাড়ি। অনিল সম্ভবত দেশের গাড়ি চুরি চক্রের সব চেয়ে বড় পাণ্ডা। শুধু গাড়ি চুরিই নয়, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখা অনিল বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারেও জড়িত বলে পুলিশের সন্দেহ। তার কাছ থেকে উদ্ধার মোবাইলগুলিতে কয়েক জন ভিআইপি ও আইনজীবীর নম্বরও মিলেছে। গুয়াহাটির ডাউন টাউন এলাকায় তার বাড়ি থেকে একটি সাদা গাড়ি মেলে। পুলিশ জানিয়েছে, তাতে অসমের বিধায়ক রুমি নাথের দেওয়া গাড়ির পাসও মিলেছে।

বরাকের বড়খোলার বিধায়ক রুমি নাথ অনিলের সঙ্গে যোগাযোগের কথা উড়িয়ে দিয়ে আনন্দবাজারকে ফোনে বলেন, “অনিলের কাছে যে সাদা গাড়িটি মিলেছে, সেটি আমার বাবার গাড়ি। বছর খানেক আগে, শিলচরের অম্বিকাপট্টি থেকে গাড়িটি চুরি হয়। বিধায়ক হিসেবে আমরা অনেক কার-পাস সই করে বিলি করি। তারই কোনও একটি অনিলের কাছে ছিল। গাড়ি চোরের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। চুরি হওয়া গাড়ি উদ্ধার হওয়ায় আমি খুশি।”

পুলিশ জানায়, অনিলের বাড়িতে আরও একটি গাড়ি মিলেছে। তাতেও রুমি নাথের পাস লাগানো। বাড়িতে অনিলের অন্য স্ত্রী রীতা চৌহান ওরফে লিলি রাভার সঙ্গে রুমির ছবি ঝোলানো রয়েছে। রীতা ধরা পড়েনি। পুলিশ জানতে পেরেছে রীতা গুয়াহাটি কংগ্রেস দফতরের অন্যতম অফিস কর্মী। রুমিদেবী বলেন, “অনেক লোকই আমার সঙ্গে ছবি তোলেন। অনিলের স্ত্রীও হয়তো ছবি তুলেছেন। হতে পারে কংগ্রেস কর্মী ভেবে আমি তাঁকে গাড়ির পাস দিয়েছি। কিন্তু, ব্যক্তিগত ভাবে আমি চিনতাম না।”

গত বছরও পুলিশ অনিলের মোবাইল ফোনের টাওয়ার অনুসরণ করে তাকে ধরার চেষ্টা করেছিল। সে বার অনিলকে ধরতে না পারলেও একটি এসইউভি এবং এ কে ৪৭ রাইফেলের ২০ রাউন্ড কার্তুজ-সহ তার দুই সঙ্গী ধরা পড়েছিল। পুলিশ জানায়, অনিলের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে। ভিন্্ রাজ্য বা গুয়াহাটি থেকে চুরি যাওয়া গাড়ির বেশির ভাগ নাগাল্যান্ডে পাঠানো হয়। সেখানেই চলে গাড়ির ভোলবদল। পুলিশের হিসেবে, ২০১০ সালের মে থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত শুধু মাত্র গুয়াহাটি থেকেই ৪ হাজার ৫৫২টি গাড়ি চুরির ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে মাত্র ৪৬৮টি গাড়ি।

কে এই অনিল চৌহান?

পুলিশ জানায়, দ্বাদশ শ্রেণিতে স্কুল ছাড়া অনিল আদতে দিল্লির খানপুরের বাসিন্দা। দিল্লিতে অটোরিকশা চালক হিসেবে জীবন শুরু করে। তার বয়স এখন ৪৭। ১৯৯৭ সাল থেকেই সে গাড়ি চুরি শুরু করেছে। চার রাজ্যে চার বার পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও জামিন পেয়ে পালায় অনিল। শেষ বার ২০১০ সালে মেঘালয় পুলিশ শিলচর থেকে সস্ত্রীক অনিলকে গ্রেফতার করেছিল। অনিলকে যোগ্য সঙ্গত দিত তার দ্বিতীয় স্ত্রী গীতা। ২০০৪ সালে প্রথম দিল্লি পুলিশের জালে ধরা পড়ে গীতা। তখনই তার হেফাজত থেকে পুলিশ ৫ হাজারটি গাড়ির চাবি ও পরিবহণ দফতরের ভুয়ো স্ট্যাম্প পেয়েছিল। দিল্লিতেই অনিলের বিরুদ্ধে ৪০০-এর বেশি মামলা রয়েছে। লাদাখ, উত্তরাখণ্ডের প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও সে গাড়ি চুরি করেছে।

২০০৫ সালে অনিল উত্তর-পূর্বে তার মূল ঘাঁটি স্থানান্তরিত করে। সস্ত্রীক অনিল বা তার দলের লোকরা অফিসের কাজের অজুহাতে বা পর্যটক সেজে মেঘালয় বা মিজোরামে যাওয়ার গাড়ি ভাড়া করত। পথে, চালককে খুন বা অজ্ঞান করে
গাড়ি নিয়ে পালােতা। গাড়ি চুরির পাশাপাশি বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচার ও টোকে গেকো পাচারেও হাত ছিল অনিলের।

অন্য দিকে, গাড়ি চুরি করতে গিয়ে এ দিন দিসপুর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এসএসবির এক জওয়ান। পুলিশ জানায়, বিশেষ নিরাপত্তা শাখার ওই জওয়ানের নাম দীপঙ্কর কোচ।

Guwahati robber police bihar Uttarpradesh Delhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy