E-Paper

বিদ্বেষের রাজনীতিতেই জ্বলছে দেশ, অভিযোগ বিরোধীদের

কংগ্রেস, তৃণমূল, আম আদমি পার্টি থেকে সব বিরোধী দলেরই মত, বিজেপি, সঙ্ঘ পরিবার এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশ যে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তারই জেরে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৩ ০৭:২৮
Manipur Violence

অশান্ত ইম্ফলে এ বার ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দাদের বাড়িতেও আগুন। ছবি: পিটিআই।

জয়পুর-মুম্বই সেন্ট্রাল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে গত কাল ভোরে আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিংহের বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের উপরে গুলি চালানোর ঘটনা এবং তার পরে হরিয়ানার নুহ, মেওয়াতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-র মিছিলকে কেন্দ্র করে হিংসা। তার জেরে আজ ফের দিল্লির কাছে হরিয়ানার গুরুগ্রামে হিংসার আগুন।

অন্য ধর্ম, সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষের জেরে একের পর এক হিংসার ঘটনার জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা বিজেপির বিভাজনের রাজনীতিকেই দায়ী করছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস, তৃণমূল, আম আদমি পার্টি থেকে সব বিরোধী দলেরই মত, বিজেপি, সঙ্ঘ পরিবার এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশ যে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তারই জেরে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘বিজেপি, সংবাদমাধ্যম ও তাঁদের সঙ্গে থাকা শক্তি মিলে গোটা দেশে ঘৃণার কেরোসিন ছড়িয়ে দিয়েছে। শুধু ভালবাসাই দেশের এই আগুন নেভাতে পারে।’’ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন এবং তার পরে আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করতেই বিজেপির মদতপুষ্ট সংগঠনগুলি এ ভাবে হিংসা ছড়াচ্ছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সর্বভারতীয় কৃষক সভার অভিযোগ, গোরক্ষক বাহিনী বিজেপির প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মদতে একের পর এক হিংসা ছড়াচ্ছে। এর লক্ষ্য, রাজস্থান ও লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ।

আরপিএফ কনস্টেবল চেতন গত কাল ট্রেনের ভিতরে প্রথমে তাঁরই বাহিনীর এএসআই টিকারাম মিনাকে গুলি করেন। তার পরে বিভিন্ন কামরায় ঘুরে ঘুরে তিন জন সংখ্যালঘুকে গুলি করে হত্যা করেন। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, গুলি করার পরে ওই কনস্টেবল বলছেন, ‘যদি ভোট দিতে হয়, যদি ভারতে থাকতে হয়, তা হলে শুধু মোদী ও যোগী, দু’জন রয়েছেন।’ অন্য দিকে, হরিয়ানার নুহয়ে ভিএইচপি-র মিছিলকে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বজরং দলের এক কর্মীর একটি আপত্তিজনক ভিডিয়ো ঘিরে আগে থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। এ ছাড়া রাজস্থানে দুই মুসলিমকে খুনের মামলায় অভিযুক্ত গোরক্ষক বাহিনীর নেতা মনু মানেসর ওই মিছিলে থাকতে পারে বলেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। সংঘর্ষে গত কালই তিন জন প্রাণ হারান। তার মধ্যে দু’জন পুলিশের হোমগার্ড। নিহতের সংখ্যা আজ বেড়ে পাঁচ হয়েছে। হিংসা ছড়ানোয় গুরুগ্রামের অনেক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় আগে থেকে ছুটি দিয়ে কর্মীদের কয়েকদিন বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়।

কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি এবং আরএসএসের মতাদর্শের ফলে ‘বিদ্বেষের দৈত্য’ বোতল থেকে বেরিয়ে পড়েছে। তাকে আবার বোতল বন্দি করতে সবাইকে একজোট হতে হবে। তাদের দাবি, রাহুল ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে এই হিংসা-বিদ্বেষের আবহ থেকে ভারতকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। তৃণমূল এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি দেশকে টুকরো টুকরো করে ফেলছে। বজরং দল, ভিএইচপি-র মিছিলকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসা হরিয়ানার বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ যখন মণিপুরের জন্য লড়াই করছে, তখন ‘মেরুদণ্ডহীন’ বিজেপি হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। তৃণমূলের প্রশ্ন, ‘বিজেপির অকর্মণ্যতার জন্য আরও কত মানুষকে প্রাণ দিতে হবে’? দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বে মণিপুরের পরে হরিয়ানায় এই ধরনের ঘটনা ভাল সঙ্কেত নয়।’’

জয়পুর-মুম্বই ট্রেনে বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের উপরে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত চেতনকে আজ বোরিভলি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তোলা হয়। ৩৩ বছর বয়সি ওই কনস্টেবলকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। পরীক্ষা করা হবে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য। মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মন্দারের প্রশ্ন, ‘‘আমার এক মুসলিম সহকর্মীর কান্না থামানো যাচ্ছে না। সে খালি বলছে, ওই নিহত ব্যক্তি তাঁর বাবা হতে পারতেন। এই নতুন ভারতই কি আমরা চাই? যেখানে কাউকে তাঁর পরিচিতি দেখে খুন করা হবে আর আমরা তাকিয়ে দেখব?’’ বিজেপি শিবির চেতনকে মানসিক ভাবে অসুস্থ বলে দাবি করছে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘যে কোনও ফ্যাসিবাদী সরকার এই রকম সশস্ত্র মানসিক ভাবে অসুস্থ গ্যাংস্টার তৈরি করতে চায়। এটা হল গোলি মারো ও বুলডোজ়ার রাজনীতির মতো বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারের ফসল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Manipur Violence Haryana BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy