Advertisement
E-Paper

মালকানগিরিতে চোখের জল, নীলাম্বুরে গুলি, প্রশ্নে সিপিএম

বাংলার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জুতোয় কি পা গলিয়ে ফেললেন কেরলের পিনারাই বিজয়নও! মাওবাদী মোকাবিলার প্রশ্নে তৈরি হওয়া বিতর্ক আপাতত এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে প্রাক্তন ও বর্তমান দুই কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রীকে। নীলাম্বুরের জঙ্গলে গত ২৪ নভেম্বর কেরল পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল কুপ্পু দেবরাজন ও অজিতা নামে দুই মাওবাদীর।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২০

বাংলার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জুতোয় কি পা গলিয়ে ফেললেন কেরলের পিনারাই বিজয়নও! মাওবাদী মোকাবিলার প্রশ্নে তৈরি হওয়া বিতর্ক আপাতত এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে প্রাক্তন ও বর্তমান দুই কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রীকে।

নীলাম্বুরের জঙ্গলে গত ২৪ নভেম্বর কেরল পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল কুপ্পু দেবরাজন ও অজিতা নামে দুই মাওবাদীর। তার পরেই শাসক জোট এলডিএফের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, কমিউনিস্ট সরকার কেন অন্য একটা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের উপরে গুলি চালাবে? ওড়িশার মালকানগিরিতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মাওবাদীদের হত্যা করা হলে যারা বিবৃতি দেয়, তারা নিজেদের সরকারের পুলিশকে একই কাজে কেন ব্যবহার করবে? শুধু বাম শরিকেরাই নয়, এমন প্রশ্ন তুলেছে সিপিএমের একাংশও। সরকারি তরফে বলা হয়েছে, সংঘর্যের মুখে পড়ে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়নি। কিন্তু তাতে বির্তক থামছে না!

কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার থাকাকালীন পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ইউএপিএ প্রয়োগ করেছিল বুদ্ধবাবুর সরকার। শাসক বামফ্রন্টের মধ্যে তখন একই রকম প্রশ্ন উঠেছিল। বুদ্ধবাবুরা যুক্তি দিয়েছিলেন, মাওবাদীদের ব্যক্তি হত্যার রাজনীতির জেরে সিপিএমের অজস্র কর্মী-সমর্থক খুন হচ্ছেন। এই অবস্থায় তাত্ত্বিক অবস্থান আঁকড়ে কোনও সরকারই বসে থাকতে পারে না। কেরলে বিজয়নের সরকারকে এখন একই যুক্তি দিতে হচ্ছে। তফাত বলতে এটাই যে, বাংলায় বুদ্ধবাবুর দলকে বিস্তর প্রাণহানির শিকার হতে হয়েছিল মাওবাদীদের হাতে। যা এখনও বিজয়নকে ভুগতে হয়নি।

সিপিএম নেতৃত্বের ওই যুক্তিতে অবশ্য কর্ণপাত করছেন না বাকি বাম নেতারা। ঘটনার পরেই সিপিআইয়ের কেরল রাজ্য সম্পাদক কে রাজেন্দ্রন কড়া বিবৃতি দিয়ে পুলিশের সমালোচনা করেছিলেন। তার পরে নিহত মাওবাদী দেবরাজনের দেহ যখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আগের রাতে শেষকৃত্যের জন্য কোঝিকোড় জেলা হাসপাতালের মর্গ থেকে বার করা হচ্ছে, তখন রাজেন্দ্রন এবং সিপিআইয়ের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য বিনয় বিশ্বম শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্বম সাফ বলেছেন, ‘‘মাওবাদীদের সঙ্গে আমাদের অবশ্যই বিরোধ আছে। কিন্তু বাম সরকারের পুলিশ আর পাঁচটা সরকারের পুলিশের মতো আচরণ করবে কেন? কোনও কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের আর যা-ই হোক, গুলি করে মারা উচিত নয়!’’

প্রশ্নের মুখে সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্য মেনে নিচ্ছেন, ‘‘এটা একটা চিরন্তন বিতর্ক! বিরোধী দলে থাকার সময়ে যা যা বলা যায়, সরকারে গেলে সব তেমন করা যায় না। নীলাম্বুরে ঠিক কী অবস্থায় পুলিশ গুলি চালিয়েছিল, শুধু আদর্শগত অবস্থান থেকে তা নিয়ে মন্তব্য করা যায় না। তবে এটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া দরকার, আমরা মাওবাদীদের রাজনৈতিক মোকাবিলারই পক্ষে।’’

এই বিতর্কের মধ্যেই আর এক প্রস্ত বিতর্ক বেধেছে নিহত অজিতার দেহ ঘিরে। মেয়ে মাওবাদী হয়ে যাওয়ার পরে অজিতার (আগেকার নাম কাবেরী) দেহ নিতে অস্বীকার করেছেন তাঁর মা ও অন্য পরিজনেরা। কে বিনায়কম নামে এক জন এর পরে কোঝিকোড়ের আদালতে গিয়ে দাবি করেন, তিনি দীর্ঘ দিন অজিতার সঙ্গেই থাকতেন। তাঁকে সৎকারের দায়িত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু তাঁরা বিবাহিত নন এবং পরিচয়ের কোনও কাগুজে প্রমাণ নেই বলে পুলিশ তাতে রাজি হয়নি। খবর পেয়ে তামিলনাড়ুর এক আইনজীবী ভগৎ সিংহ (আসল নাম কি না, কেউ জানে না) কোচি আদালতে দাবি করেছেন, তিনি এক কালে অজিতার সহপাঠী ছিলেন। তাঁর হাতেই দেওয়া হোক মৃতদেহটা। কিন্তু আদালত তাঁর কাছেও প্রমাণ চেয়েছে এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে।

লাশকাটা ঘরে আপাতত শায়িত অজিতার দেহ। বিতর্কটা শুধু বেঁচে!

CPIM Malkangiri Nilambur Maoists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy