যাত্রিভাড়ায় লোকসান ঠেকাতে আজ থেকে বর্ধিত ভাড়া চালু হল রেলে। নতুন নিয়মানুযায়ী দূরপাল্লার ট্রেনে (এসি ও নন-এসি) প্রতি কিলোমিটারে ন্যূনতম আধ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ দু’পয়সা পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার ফলে রেলের ঘরে চলতি অর্থবর্ষে অতিরিক্ত প্রায় ৭০০ কোটি টাকা আসবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রিভাড়ার ক্ষেত্রে সংস্কার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আংশিক। ফলে রেলের ভর্তুকি-রোগ যেমন ছিল, তেমনই থেকে যাবে।
রেল-সূত্রের দাবি, বর্তমানে প্রতিটি টিকিটে প্রায় ৪৬ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে। তার ফলে যাত্রী-খাতে ফি-বছর প্রায় ৩০-৩২ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হয় রেলকে। সেই ভর্তুকি দিতে গিয়ে রেলের কোষাগার কার্যত শূন্য হয়ে পড়েছে। নতুন প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রেলকর্তাদের। এই পরিস্থিতিতে রেল যাতেনিজের পায়ে কিছুটা হলেও দাঁড়াতে পারে, সেই লক্ষ্যেই ওই সামান্যভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল। পরিসংখ্যান বলছে, ওই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে চলতি অর্থবর্ষে ৭০০ কোটির কাছাকাছি ও আগামী অর্থবর্ষে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি বাড়তি অর্থ হাতে আসবে রেলের। কিন্তু তাতেও লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, গত অর্থবর্ষে যাত্রিভাড়া খাতে রেলের ঘরে আশি হাজার কোটি টাকা ঢুকলেও এ বছর সেই লক্ষ্যমাত্রা ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৯২,৮০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সেই বাড়তি টাকার কিছুটা এই নতুন যাত্রিভাড়া থেকে এলেও এখনও দশ-এগারো হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয়ের পথ খুঁজে বার করতে হবে রেলকে।
বিরোধী দল কংগ্রেস যাত্রিভাড়া বৃদ্ধির সমালোচনা করে সরব হয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘বাড়তি দায় যাত্রীদের ঘাড়েই চাপবে।’’ যদিও রেলকর্তাদের যুক্তি, ভাড়া বৃদ্ধির এই হার নেহাতই মামুলি। দিল্লি থেকে কলকাতার ট্রেনে বাতানুকূল শ্রেণিতে মাত্র তিরিশ টাকা ভাড়া বাড়তে চলেছে। তা দিতে যাত্রীদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পাশাপাশি ওই বৃদ্ধির পিছনে রেল মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ভাড়া বাড়ানোর পরামর্শকে হাতিয়ার করেছেন রেলকর্তারা। ২০২৪সালের ডিসেম্বর মাসের ওই রিপোর্টে রেলের আয় বাড়াতে যাত্রিভাড়া বাড়ানোর উপরেই জোর দেওয়া হয়েছিল। তবে রিপোর্টে সাধারণ শ্রেণিতে হাত না-দিয়ে বাতানুকূল শ্রেণিতে বড় মাপের ভাড়া বাড়ানোর মতো সংস্কারমুখী ও সাহসী পদক্ষেপের পরামর্শ দেওয়াহয়েছিল। বলা হয়েছিল, বাতানুকূল ট্রেনগুলির ভাড়া এমন ভাবে বাড়ানো হোক যে, ট্রেন চালানোর খরচ সেখান থেকেই উঠে আসে। কিন্তু সেই পরিমাণে ভাড়া বাড়ালে সড়ক ও বিমান পরিবহণের কাছে যাত্রী হারানোর ভয় রয়েছে রেলের। তাই ওই সাহসী সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করার সাহস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে অশ্বিনীবৈষ্ণবের মন্ত্রক।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)