Advertisement
E-Paper

ভিড় টানছে না নাটক, মত রুদ্রপ্রসাদের

কলকাতাতেও এখন ভিড় জমে না থিয়েটারে। নান্দীকার, ব্রাত্যজনের মতো নাট্যগোষ্ঠীর প্রয়োজনাতেও সব সময় দর্শক পাওয়া যায় না। এমনই কথা জানালেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত।

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০২:৫২
শিলচরে নাট্য প্রশিক্ষণ শিবিরে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। — নিজস্ব চিত্র

শিলচরে নাট্য প্রশিক্ষণ শিবিরে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। — নিজস্ব চিত্র

কলকাতাতেও এখন ভিড় জমে না থিয়েটারে। নান্দীকার, ব্রাত্যজনের মতো নাট্যগোষ্ঠীর প্রয়োজনাতেও সব সময় দর্শক পাওয়া যায় না। এমনই কথা জানালেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত।

তবে এ সবে এতটুকু হতাশা নেই তাঁর মনে। শিলচরে প্রশিক্ষণ শিবিরে কয়েক জনকে নাটকে আগ্রহী দেখে তাঁর আনন্দ ধরে না। বললেন, ‘‘ওদের আন্তরিকতা ও একাগ্রতা আমার বড় ভাল লাগল।’’ এর পরেই নির্দ্বিধায় মন্তব্য করলেন, ‘‘কলকাতাকে কেন যে সবাই থিয়েটারের মক্কা বলে ভাবেন! নাট্যপ্রতিভা কোথাও কম নেই।’’ বরং কলকাতার মুখাপেক্ষীনতা অন্যদের হীনমন্যতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, আশঙ্কা তাঁর। পূর্ববঙ্গে জন্ম রুদ্রপ্রসাদবাবুর। প্রান্ত থেকে ধীরে ধীরে উঠে এসেছেন কেন্দ্রবিন্দুতে। এখন বাংলা থিয়েটারের সর্বোজ্জ্বল নক্ষত্র। আবার ভারতীয় থিয়েটারের কথা বললেও রুদ্রপ্রসাদকে না টেনে আলোচনা শেষ করা যায় না। কিন্তু তিনি নিজে কেন্দ্রীভূত করার চরম বিরোধী। সমান গুরুত্ব দিতে চান প্রান্তিক প্রতিভাকে। বলেন,‘‘ শুধু কেন্দ্রের দিকে চোখ রাখা, এই দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক নয়। সেখান থেকে সঙ্কট বাড়ছে।’’

তাই শিলচরের ‘ভাবীকাল’-এর ৮ থেকে ১৬ অগস্ট যুব নাট্য কর্মশালার আমন্ত্রণ পেয়েই ছুটে আসেন তিনি। শেষ তিনদিন পুরোপুরি সময় কাটান প্রশিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কারও বয়স ১৪, তো কারও ৪১। ৫০ ছুঁইছঁইও ছিলেন কয়েক জন। সবার সঙ্গে মিশে গেলেন একেবারে তাঁদেরই মতো। ১৫ অগস্টও ছুটি নেই। সারাদিন চলে ক্লাস গুটিয়ে আনার পালা। সন্ধেয় ভাবীকালের প্রধান শান্তনু-দোলনচাঁপা পালের বাড়িতে আড্ডা বসল শহরের নাটকপ্রেমীদের সঙ্গে। শেখর দেবরায়, বিশ্বজিৎ শীল, সায়ন চক্রবর্তী, শান্তনু রায়, সত্যজিৎ বসু, রাজেশ পাল। ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের আশিস ভৌমিক, অজয় রায়, মণি ভট্টাচার্য, বিভাস রায়, প্রণব পালচৌধুরী। পর দিন ভোরে বিমান। তবু আলোচনা চলল দীর্ঘক্ষণ। সঙ্গীত-নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডজয়ী বঙ্গবিভূষণকে এত কাছে পেলে কি প্রশ্ন ফুরোয়! রুদ্রপ্রসাদও যে হাসিমুখে শেষ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ওঠার পাত্র নন।

তাই আলোচনা চলল। নাটক ভাল হয় না বলেই কি দর্শক মেলে না আজকাল? অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে নাট্যভুবন দাপিয়ে বেড়ানোর অভিজ্ঞতায় রুদ্রপ্রসাদ এমন মন্তব্য সোজাসুজি খারিজ করে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘দর্শক না পাওয়া এক সামগ্রিক সমস্যা। নাটকবিমুখতা এখন সর্বত্র। বিনোদনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে সমাজও উদাসীন।’’

পাশাপাশি শোনান, কিছু পরিচালকও সে জন্য কম দায়ী নন। তাঁরা নাটকটাকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করেন না। দোষ রয়েছে সরকারেরও। নাটকের জন্য কোথায় আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা! বরং কথায় কথায় শুনিয়ে দেওয়া হয়— বাচ্চা না কাঁদলে মা-ও দুধ দেয় না।

রুদ্রপ্রসাদের বক্তব্য, সমস্যাটা অন্যত্র। আসলে বর্তমান ফ্যাশনের মধ্যে নাটকটা পড়ছে না যে! তাই বলে নাটকের ফ্যাশন হয়ে যাওয়ারও বিরোধী তিনি। বলেন, ‘‘নাটক আবার বাজার অর্থনীতির অংশ হয় কী করে! তাহলে সে আর নাটক কোথায় রইল!’’ বরং তিনি বিজ্ঞাপনের বদলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচারের পক্ষপাতী। তা হলেই নাটকের মানুষ যে স্বতন্ত্র, তা স্পষ্ট হবে। সবাই না হলেও কেউ কেউ বুঝবেন, এরা সমাজটাকে একটা ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে চান।

কিন্তু বাড়ি বাড়ি ঘুরে কী আর থিয়েটার বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব? রুদ্রপ্রসাদের বিশ্বাস, থিয়েটার কখনও বিলীন হতে পারে না। যত দিন পৃথিবীতে শুধুমাত্র দু’জন মানুষ বেঁচে থাকবেন, তত দিন থিয়েটার চলবে। ধর্ম যেমন। যত দিন মানুষ থাকবেন, তত দিন ধর্মাচার থাকবে, আবার একে ঘিরে সঙ্কটও থাকবে।

তাই বলে তিনি নাটককে দীর্ঘদিন মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে চান না। কারণ ওই অবস্থায় আপনজনও নাকি বলেন, ঠাকুর কেন যে নিয়ে যান না তাঁকে! কী কষ্টই না পাচ্ছেন! তাই তাঁর আহ্বান, ‘‘যাঁরা নাটককে ভালবাসেন, তাতে অধ্যবসায় বজায় রাখুন। অধ্যবসায় ছাড়া কোনও কিছু হয় না।’’

এর পরই তাঁর গলায় ফের আক্ষেপ আর আত্মবিশ্বাসের মিশেল। বলেন, ‘‘সময় এখন বড় তীব্র। একান্নবর্তী পরিবার বা যৌথ অনুভূতির জায়গাটাই শেষ হয়ে গিয়েছে। বাচ্চারা শিকড়বিহীন। সবাই মিলে একটা শিশুকে নিয়ে হাসাহাসি-নাচানাচি করছে, সে দৃশ্য উধাও। বরং ভাতিজাকে মারলে দাদাই তেড়ে আসেন, তুই মারার কে! এর পরও কোনটা যে কী কাণ্ড করে ফেলবে কখন, কে জানে! কখনও কখনও একটা ফুলকিই দাবানলের সৃষ্টি করে। কে বলতে পারে, আমাদের কার ঘরে কখন ফুলকি দেখা দেবে!’’

Rudraprasad Sengupta Theater
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy