Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দাগি নেতারা ভোটে লড়তে পারবেন না, প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের

দাগি নেতারা  আজীবন ভোটে লড়তে পারবেন না— এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক দিকে রাজনৈতিক নেতাদের যেমন এতে ঘুম ছুটেছে, কমিশনের এই সুপারিশ কতটা সংবিধান সঙ্গত— তা নিয়েও বিতর্ক বেঁধেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২০
Share: Save:

দাগি নেতারা আজীবন ভোটে লড়তে পারবেন না— এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক দিকে রাজনৈতিক নেতাদের যেমন এতে ঘুম ছুটেছে, কমিশনের এই সুপারিশ কতটা সংবিধান সঙ্গত— তা নিয়েও বিতর্ক বেঁধেছে।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, কেউ ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কম পক্ষে দু’বছরের কারাদণ্ড পেলে সাজার মেয়াদ শেষের পরে ছয় বছর তিনি ভোটে লড়তে পারবেন না। যে গেরোয় ফেঁসে রয়েছেন লালু প্রসাদ। কমিশনের প্রস্তাব কার্যকর হলে লালু বা শশিকলার মতো নেত্রীদের কোনও দিনই ভোটে লড়া হবে না।

বিচারাধীন বিষয় বলে কোনও রাজনৈতিক দলই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছে না। কিন্তু অধিকাংশ নেতারই যুক্তি হল, কমিশনের এই প্রস্তাব ঠিক নয়। এক অপরাধের জন্য সারা জীবন শাস্তি দেওয়াটা ঠিক নয়। ব্যতিক্রম হলেন সেই লালু প্রসাদই। আজ তিনি কমিশনের এই প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

ফৌজদারি মামলা থাকা সত্ত্বেও রাজনীতিকদের ভোটে লড়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সরব এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস)। তার প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য জগদীপ চোখার কমিশনের এই প্রস্তাবকে সমর্থন করছেন।
চোখারের যুক্তি, ‘‘রাজনীতিকরা ভোটে জিতে আইন তৈরির ক্ষমতা পান বলে নিজেদেরও ভাবেন আইনের ঊর্ধ্বে। কমিশনের এই প্রস্তাব কার্যকর হলে, অপরাধের জোরে ক্ষমতায় আসাও যেমন রোখা যাবে, নেতা-মন্ত্রীদের অপরাধ-দুর্নীতিতে জড়ানোও বন্ধ হবে।’’

পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন আইনজীবীরা। মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবের যুক্তি, ‘‘কমিশনের এই প্রস্তাব সংবিধানের পরিপন্থী। সংবিধানের চতুর্দশ অনুচ্ছেদে নাগরিককে সমতার অধিকার দেওয়া হয়েছে। সাধারণ কেউ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত তাকে সংশোধনাগারে পাঠায়। যাতে সে সংশোধিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তা হলে রাজনীতিকরাও কেন সংশোধিত হয়ে রাজনৈতিক জীবনে ফেরার সুযোগ পাবে না?’’

দাগি নেতাদের আজীবন ভোটে লড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞার দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছেন দিল্লির বিজেপি নেতা অশ্বিনীকুমার উপাধ্যায়। তাঁর আবার যুক্তি, সংবিধানের সমতার অধিকারে এখন রাজনীতিকদের তুলনায় আমজনতাই বৈষম্যের শিকার। তাঁর ব্যাখ্যা, সাধারণ মানুষ গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে চাকরি চলে যায়। কিন্তু রাজনীতিকরা দোষী সাব্যস্ত হলেও দলের পদে তো বসতে পারেনই, ছয় বছর কেটে গেলে মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়ক হতেও বাধা নেই।

এই বিতর্কে ঘুম ছুটেছে অভিযুক্ত নেতাদের। কারণ সুপ্রিম কোর্ট কমিশনের প্রস্তাবে সায় দিলে দাগি নেতাদের কোনও দিনই আর ভোটে লড়া হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE