Advertisement
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
National News

স্বাস্থ্য: রাজ্যকে শর্তহীন অর্থ দিক কেন্দ্র

কেন্দ্রীয় প্রকল্প ফুলেফেঁপে ওঠার ফলে, কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য রাজ্যের অর্থ বরাদ্দর জায়গা দখল করেছে।

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ এখন রাজ্যগুলি প্রসবকালীন বা শিশুমৃত্যু, অপুষ্টির মতো সমস্যার মোকাবিলাতেও কাজে লাগাচ্ছে।

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ এখন রাজ্যগুলি প্রসবকালীন বা শিশুমৃত্যু, অপুষ্টির মতো সমস্যার মোকাবিলাতেও কাজে লাগাচ্ছে।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ১৪:২৪
Share: Save:

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন: বিশল্যকরণী না কি বিপথগামী ব্যবস্থা?

স্বাস্থ্য খাতে রাজ্যগুলি যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, তার সঙ্গে কেন্দ্রের অর্থও যোগ করতে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের পরিকল্পনা হয়েছিল। আর একটি উদ্দেশ্য ছিল, রাজ্যগুলি যাতে বাজেটের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যয় করে, তা নিশ্চিত করা। তাতে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখতেও বাধ্য করা গিয়েছে রাজ্যগুলিকে।

হয়তো এর অন্য ফলও ফলেছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প ফুলেফেঁপে ওঠার ফলে, কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য রাজ্যের অর্থ বরাদ্দর জায়গা দখল করেছে। ২০১৪ পর্যন্ত রাজ্য বাজেটকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ সরাসরি রাজ্যের স্বাস্থ্য সংগঠনগুলি কাজে লাগিয়েছে।

আরও পড়ুন:

বছরের পর বছর ধরে, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ স্বাস্থ্য পরিষেবাকে মজবুত করতে কাজে লেগেছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন, কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক-নার্স, এমনকী আশা কর্মীদের নিয়োগেও ব্যয় হয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বদলে রাজ্যের খরচ করা উচিত ছিল। কেন্দ্রীয় অর্থের উপর এতটাই নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে যে— জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ এখন রাজ্যগুলি প্রসবকালীন বা শিশুমৃত্যু, অপুষ্টি, টিবি, মশাবাহিত রোগ, মানসিক স্বাস্থ্যের মতো সমস্যার মোকাবিলাতেও কাজে লাগাচ্ছে।

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মধ্যে এত স্বাস্থ্য প্রকল্প ঢুকে গিয়েছে, রাজ্যের কর্তারা প্রতি বছর এত ইচ্ছেপূরণের তালিকা নিয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হন যে, প্রশ্ন উঠতে পারে— রাজ্য স্তরে স্বাস্থ্য নীতি তৈরি করতে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনই কি একমাত্র সহায়-সম্বল?

এখানেই সংস্কার ও সংশোধনের প্রয়োজন।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারির বাজেট এখানে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পরে, রাজ্যগুলির হাতে এখন যথেষ্ট অর্থ। এ বার তাই জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো দরকার। স্বল্পমেয়াদে তা সম্ভব হবে না। কারণ রাজ্যগুলি এই অর্থের উপর খুব বেশি রকম নির্ভরশীল। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল, ভারতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্র দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত। এই ক্ষেত্রে কম পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। ফলে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে আরও বেশি অর্থ ঢালার দাবিও কম নয়।

কিন্তু প্রশ্ন হল, এখন যে ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য স্বাস্থ্য খাতে অর্থ ঢালছে, তাতে কি কাজের কাজ কিছু হচ্ছে?

২০১৭-১৮-র বাজেট অনুযায়ী, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের একটা বড়সড় অংশ কর্মী নিয়োগে বরাদ্দ হয়েছিল। কেন্দ্রের যদি সত্যিই গোটা দেশে স্বাস্থ্য খাতে মোটা অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা থাকে, তা হলে প্রশ্ন তোলা উচিত, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনই কি একমাত্র পথ?

ভাল হবে যদি কেন্দ্র রাজ্যকে একেবারে শর্তহীন অর্থ দেয়। তা হলে রাজ্য নিজের পরিকল্পনা মতো জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনকে কাজে লাগিয়ে আরও ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবার বন্দোবস্ত করতে পারবে। মাতৃত্ব, শিশু স্বাস্থ্য ও অপুষ্টির সমস্যার সমাধান করতে পারবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্দেশ্য এটা কখনও-ই হতে পারে না যে রাজ্য নিজের বরাদ্দ কমিয়ে কেন্দ্রের অর্থ কাজে লাগাবে। বরঞ্চ কেন্দ্রীয় অর্থ দিয়ে রাজ্যকে উৎসাহিত করা উচিত, যাতে রাজ্যগুলি যেখানে ঘাটতি রয়েছে, সেখানে আরও অর্থ ঢালে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের পরিসংখ্যান কিন্তু তার উল্টো গল্পই বলে।

(লেখক সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার, পাবলিক হেল্থ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া, নয়াদিল্লি)

অন্য বিষয়গুলি:

Budget Union Budget Central Budget Budget 2018 Budget 2018-19 Health National Health Mission National Rural Health Mission NHM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy