Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Migrant Workers

ঘরের পথে মৃত্যু কত, জানে না কেন্দ্র

এই ধরনের তথ্য রাখার রেওয়াজ নেই বলে, ঘরমুখো পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও প্রশ্ন নেই বলে সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনেই জানিয়ে দিয়েছে সরকার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

লকডাউনে কাজ খুইয়ে বাড়ির পথ ধরা কত জন পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তাতেই মারা গিয়েছেন, কাজ খুইয়েছেন কত— সরকারের ঘরে এ সবের কোনও তথ্য নেই বলে জানাল কেন্দ্র। এই ধরনের তথ্য রাখার রেওয়াজ নেই বলে, ঘরমুখো পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও প্রশ্ন নেই বলে আজ সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনেই জানিয়ে দিল সরকার।

সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির টুইট, “লজ্জাজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। প্রধানমন্ত্রীর হঠকারী, অপরিকল্পিত এবং প্রস্তুতিহীন লকডাউনের ঘোষণা লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে হাজার-হাজার মাইল হাঁটতে বাধ্য করেছিল। সরকার এখন বলছে, বাড়ি ফেরার পথে তাঁদের কত জন প্রাণ হারিয়েছেন, লকডাউনে কত জন কাজ খুইয়েছেন, তার তথ্যই নেই তাদের কাছে।” বিরোধী শিবিরের কটাক্ষ, উমর খালিদের মতো সিএএ-এনআরসির বিরোধী প্রতিবাদীদের ‘প্ররোচনাতেই’ যে দিল্লিতে সংঘর্ষ
ছড়িয়েছিল, তা নিয়ে নাকি লক্ষ লক্ষ পাতার প্রমাণ রয়েছে দিল্লি পুলিশের সিন্দুকে। অথচ লকডাউনে রাতারাতি কাজ খোয়ালেন যাঁরা, হেঁটে, বিপদের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরে যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক প্রাণ খোয়ালেন, তাঁদের কোনও তথ্য নেই মোদী সরকারের কাছে!

প্রায় ছ’মাস পরে সংসদে অধিবেশনের প্রথম দিনেই লোকসভায় পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়েন শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার। জবাবে, কাজ খোয়ানো ও ঘরের পথে মৃত শ্রমিকদের তথ্য না-থাকার কথা জানান তিনি। খারিজ করেন ঘরের পথে মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সম্ভাবনাও।

প্রশ্ন রাখা হয়, লকডাউনে কোন রাজ্যে কত শ্রমিক ফিরেছেন? উত্তরে রাজ্যওয়াড়ি একটি হিসেব দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ফিরেছেন ১৩.৮৪ লক্ষ। বিহারে ১৫ লক্ষেরও বেশি। সারা দেশে ১.০৪ কোটিরও বেশি। এঁদের মধ্যে কত জন প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযানে কাজ পেয়েছেন? একশো দিনের কাজেই বা কত জনের রোজগারের বন্দোবস্ত করা গিয়েছে? গোড়া থেকে কেন্দ্রের অবশ্য অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিক সম্পর্কিত তথ্য না-দেওয়াতেই প্রথম প্রকল্পটির সুবিধে থেকে বঞ্চিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

আরও পড়ুন: সেনার পাশে দাঁড়ান, সংসদকে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

সরকার সময় মতো ব্যবস্থা না-করাতেই কি লক্ষ লক্ষ শ্রমিক দীর্ঘ পথ হেঁটে রওনা দিতে বাধ্য হয়েছেন? জবাবে মন্ত্রী গাঙ্গোয়ার বোঝানোর চেষ্টা করেন, সরকার নিষ্ক্রিয় ছিল না। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চলেছে ৪৬১১টি। নিখরচায় জল ও খাবার জুগিয়ে ফেরানো হয়েছে ৬৩.০৭ লক্ষেরও বেশি শ্রমিককে।

শ্রমিক সংগঠনগুলির ক্ষোভ, গোড়াতেই মোদী সরকারের উচিত ছিল, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরতে দিয়ে, তবে লকডাউনের পথে হাঁটা। তারা তা করেনি। সাংসদদের ফেরার ব্যবস্থা হলেও, বাড়ি ফেরার সময় পাননি পরিযায়ী শ্রমিকেরা। কাজ ও আশ্রয় খুইয়ে ঘরের পথ ধরা ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্তত দু’শো জন রাস্তাতেই মারা গিয়েছেন। কেউ গাড়ি দুর্ঘটনায়, কেউ ক্লান্তিতে বা অসুস্থ হয়ে। মৃত্যু হয়েছে গভীর ঘুমের মধ্যে রেলে কাটা পড়ে। রেললাইনে পড়ে থাকা তাঁদের রক্ত-মাখা রুটিগুলির ছবি রীতিমতো প্রতীকী হয়ে আজও গেঁথে রয়েছে দেশবাসীর মনে।

শুধু সরকারই তাঁদের হিসেবে রাখেনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE