ব্যক্তিপরিসরের অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। এর পরেই সামাজিক পরিসরে প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ বা গোয়েন্দা বাহিনী যে ভাবে টেলিফোন এবং ই-মেলে আড়ি পাতে, তা কতটা যুক্তিযুক্ত। পুলিশের আকছার আড়ি পাতার ঘটনাও কি তা হলে মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে না?
স্বরাষ্ট্র দফতরের তথ্য বলছে, এ রাজ্যে যখন পাহাড়ে চূড়ান্ত অশান্তি এবং জঙ্গলমহলে মাওবাদী তৎপরতা তুঙ্গে তখন মাসে গড়ে ৩৫-৩৬ হাজার টেলিফোনে আড়ি পাতা হত। এ সবই ছিল আইন মেনে অনুমতি নিয়ে আড়িপাতার ঘটনা। এর বাইরে পুলিশ ও গোয়েন্দারা কত হাজার ফোনে সরকারের বিনা অনুমতিতে আড়ি পেতেছে তার ইয়ত্তা নেই। জঙ্গলমহল এখন শান্ত, পাহাড়ও এই ক’দিন আগেও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্র সূত্রের খবর, আড়ি পাতার সংখ্যা এখনও আগের মতোই রয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিনা অনুমতিতে যখন তখন যে কারও ফোনের কথা শোনার প্রবণতা। এই তালিকায় রয়েছেন মন্ত্রী থেকে শাসক ও বিরোধী দলের নেতা, আমলা থেকে সাংবাদিক সকলেই।
ব্যক্তিপরিসরের গোপনীয়তা রক্ষা সংক্রান্ত রায় আড়িপাতার উপর কোনও প্রভাব ফেলবে কি না তা নিয়েই এখন দ্বিধাবিভক্ত আইনি ও প্রশাসনিক মহল। আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘দেশের সংবিধান অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি আইনে বাধা না থাকলে যা খুশি করতে পারেন। কিন্তু সরকার আইনি অধিকারের বাইরে কিছুই করতে পারে না। ফলে টেলিগ্রাফ আইনে আড়িপাতার বিধিবদ্ধ ব্যবস্থার বাইরে কিছু করার ক্ষমতা নেই সরকারের। যদি পুলিশ তা করে তা শাস্তিযোগ্য। এই রায়ের ফলে পুলিশ বিনা অনুমতিতে আড়ি পাতার ক্ষেত্রে সতর্ক হবে বলে আশা করব।’’ সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘টেলিগ্রাফ আইন এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনে কাদের ফোনে বা ই-মেলে আড়ি পাতা যাবে, কত দিন তা করা যাবে, এ সব স্পষ্টভাবে বলা রয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এ সব মেনে চললে ঠিক আছে। কিন্তু তা না হলে ব্যক্তিপরিসরের অধিকার লঙ্ঘিত হয়। এই রায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে সতর্ক হতে বাধ্য করবে।’’