সাদা কাপড়ে ঢাকা টেবিলের উপরে এনে রাখা হল জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিন। সামনে গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর আবক্ষ ছবি। এগিয়ে এলেন বিজয়ের পুত্র ঋষভ। পাশে দাঁড়ানো দিদির কোল থেকে বুকে টেনে নিলেন ভাগ্নীকে। এরপর বছর দু’য়েকের সেই মেয়েকে দাঁড় করালেন কফিনের সামনে টেবিলে। মুহূর্তের মধ্যে সেই একরত্তি ছবি দেখিয়ে বলল, “দাদু!” চোয়াল শক্ত করে দাঁড়ানো ঋষভের আবেগের বাঁধ ভাঙল।
অ্যাম্বুল্যান্সে কফিন তোলার মুখে ঘটনাস্থলে দাঁড়ানো বিজয় রূপাণীর দিদি এক স্থানীয় নেতার হাত ধরে বললেন, “এই সময়টা খুব কষ্টের। সকলেই যেন আপনজনের মৃতদেহ দ্রুত পেয়ে যান, সেটা দেখবেন। আপনাদের দাদা বেঁচে থাকলেওএটাই চাইতেন।”
আমদাবাদে বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনার চার দিনের মাথায় সোমবার দুপুরে পরিজনের হাতে তুলে দেওয়া হল গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মরদেহ। রূপাণী পরিবারের সদস্য, অনুরাগীদের পাশাপাশি বি জে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলও। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে মরদেহ বার করার পরে অ্যাম্বুল্যান্সে তা নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরে। বিমানে রাজকোটে। সন্ধ্যায় সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য হয়।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া গেলেও আমদাবাদের হাসপাতাল চত্বরে পরিজনের দেহের অপেক্ষায় এ দিনও বহু মানুষের ভিড়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলতে পারছেন না, কবে সমস্ত দেহ পরিজনের হাতে তুলে দেওয়া যাবে। বি জে মেডিক্যাল কলেজের অতিরিক্ত সুপার রজনীশ পটেল এ দিন জানান, এখনও পর্যন্ত ১১৯ জনের ডিএনএ রিপোর্ট এসেছে। সোমবার রাত পর্যন্ত ৭৬টির বেশি দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের পরিবারের হয়তো একাধিক জন মারা গিয়েছেন। একটি মৃতদেহের ডিএনএ রিপোর্ট এলেও বাকি দেহের আসেনি। ফলে তাঁদেরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’’ এমনই অবস্থা ছেলে এবং বৌমার দেহের অপেক্ষায় থাকা অনিলভাই পটেলের। তাঁর পুত্র হর্ষিতের ডিএনএ রিপোর্ট এখনও আসেনি। পুত্রবধূ পূজার রিপোর্ট এসে গিয়েছে। ফলে তাঁরা বুঝতে পারছেন না কী করবেন। এ দিকে পূজার পরিবার চায়, এখনই মেয়ের দেহ নিয়ে ফিরে যেতে।
এই টানাপড়েনের মধ্যেই তদন্তের তৎপরতা চলছে দুর্ঘটনাস্থলে। এ দিন ভেঙে পড়া বিমানের কিছু অংশ সরাতেই পাওয়া যায় ককপিট ভয়েস রেকর্ডার। আগেই উদ্ধার হয়েছিল বিমানের ব্ল্যাক বক্স। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ‘ডিকোড’ করতে পারলে জানা যাবে, কী ঘটেছিল ‘ড্রিমলাইনারে’। কবে প্রিয়জনের দেহ পাওয়া যাবে, অপেক্ষা এই প্রশ্নের উত্তরেরও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)