মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই মেলার পর এবার ক্ষতিপূরণের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিন ব্যক্তি। দীর্ঘ কারাবাস এমনকি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়ে যাওয়ার পরও এঁদের রেহাই দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এখন ক্ষতিপূরণের দাবি সামনে আসায় আজ এই বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে নোটিস জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, ক্ষতিপূরণের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটর জেনারেলের সহযোগিতা চেয়েছে শীর্ষ আদালত। এর পরেই সুপ্রিম কোর্ট ঠিক করবে ওই ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না বা ঠিক কত অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাঁদের।
শীর্ষ আদালতে যাঁরা ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন, তার মধ্যে রয়েছেন ৪১ বছর বয়সি রামকিরত মুনিলাল গৌড়। ভুল পথে সাজা মেলায় ১২ বছর জেলবন্দি ছিলেন তিনি। এর মধ্যে ছয় বছর কেটেছে মৃত্যুদণ্ডের আসামি হিসেবে। মুক্তি দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ‘ত্রুটিপূর্ণ এবং কলঙ্কিত তদন্তের মাধ্যমে’ তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছিল।
শীর্ষ আদালতের বক্তব্য ছিল, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধের মামলা সাজানো হয়েছে, অবৈধ ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ ও কলঙ্কিত তদন্তের মধ্যে দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে, অন্যায় ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। ভুল কারণে ১২ বছর জেলে থাকতে হয়েছে তাঁকে। ফলে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী ওই ব্যক্তির মৌলিক অধিকারগুরুতর ভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। তাঁর জীবন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্মান যেহেতু নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তাই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উচিত রামকিরতকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। এখন সেই রায়কে সামনে রেখে মহারাষ্ট্র সরকারের থেকে ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন রামকিরত।
ক্ষতিপূরণের দ্বিতীয় আবেদনকারী কাট্টাভেল্লাই। তামিলনাড়ুতে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল তাঁর। তাঁকে রেহাই দেওয়ার সময় শীর্ষ আদালত বলেছিল, ভুল ভাবে কারাবাস হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আইন থাকা উচিত।
তৃতীয় আবেদনকারী সঞ্জয়কে উত্তরপ্রদেশে তিন বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করার মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই আদেশ খারিজ করে দেয়। শীর্ষ আদালত বলেছিল, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করা যায়নি। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য ছিল, ‘আইনে নীতিগত ভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করার কোনও জায়গা নেই’।
আজ এই তিন ব্যক্তির আবেদন নিয়ে বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে নোটিস দিয়েছে।
পাশাপাশি, অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানি ও সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছে। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যগুলিকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)