বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদরা সবাই যখন আজ সকালে সংসদের মকরদ্বারের সামনে মিছিলের তোড়জোড় করছেন, তৃণমূলের তিন মহিলা সাংসদ তত ক্ষণে অন্য পথ ধরে পৌঁছে গিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সামনে। পূর্ব পরিকল্পনা মতো আজ এই কৌশল করল তৃণমূল। গত কাল থেকেই স্পষ্ট হচ্ছিল— প্রায় ৩০০ জন বিরোধী সাংসদকে কমিশনের ধারেকাছে পৌঁছতে দেওয়া হবে না, ভিতরে ঢোকার প্রশ্নই নেই। অথচ কমিশনের নির্দেশমাফিক ৩০ জনের প্রতিনিধিদল যদি ভিতরে গিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করত, তা হলে বিক্ষোভ-ধর্নার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটাই মাঠে মারা যেত। সেই কারণেই প্রমীলা ব্রিগেডকে কাজে লাগিয়ে সমান্তরাল প্রতিবাদ করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
তিন সাংসদ দোলা সেন, প্রতিমা মণ্ডল এবং মমতা ঠাকুর আজ সকালে নির্বাচন কমিশনের সামনে পৌঁছে যান তৃণমূলের আজকের স্লোগান লেখা ‘চুপি চুপি ভোটে কারচুপি’ বোর্ড হাতে নিয়ে। শান্তিপূর্ণ ভাবে সেখানে ধর্না দিতে শুরু করেন। তিন জন মাত্র থাকায় জমায়েত সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাও ভঙ্গ হয়নি, পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা বাধাও দিতে পারেননি গোড়ায়। তবে তার পরে পুলিশ জোর করতে শুরু করে। দোলা পুলিশকে বলেন, “আমরা রাস্তা আটকাইনি, ১৪৪ ধারাও ভাঙিনি। আমাদের পায়ের সমস্যা রয়েছে, বয়স্ক মানুষ, তাই গাড়িতে একটু আগে চলে এসেছি। বাকিরাও আসছেন। আমাদের নাম নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া রয়েছে।” পুলিশ পাল্টা প্রশ্ন করে, তিন জনেরই পায়ের সমস্যা রয়েছে কি না। দোলা বলেন, তিনি ‘নি ব্রেস’ পরে রয়েছেন, দরকার হলে দেখাতে পারেন। প্রায় ৩টে পর্যন্ত তাঁরা ওখানে ধর্না দেন, পরে বসেও পড়েন। শেষ পর্যন্ত মমতা এবং প্রতিমাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে সংসদে পৌঁছে দেওয়া হয়। তোলার সময় ধস্তাধস্তিতে মমতা আহতও হন। তৃণমূল চিন্তাভাবনা করছে, মহিলা সাংসদদের হেনস্থার প্রতিবাদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের বিরুদ্ধে সংসদে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনা যায় কি না।
অন্য দিকে, পার্লামেন্ট স্ট্রিটে ব্যারিকেডের সামনেও কার্যত খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয় পুলিশ এবং তৃণমূলের মহিলা ব্রিগেডের। ব্যারিকেডের মাথায় চড়ে বসেন মহুয়া মৈত্র, মিতালি বাগ, সাগরিকা ঘোষ। ধাক্কাধাক্কিতে মিতালির চশমা ভেঙে যায়। সেখান থেকে তাঁরা বাংলায় স্লোগান দিতে থাকেন। রাজপথে দাঁড়িয়ে আগাগোড়া স্লোগান দেন বর্ষীয়ান সাংসদ মালা রায়। অন্য দিকে ব্যারিকেড টপকানো এসপি নেতা অখিলেশ যাদবের কাছে চলে যান তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর হাতে বাংলায় লেখা প্ল্যাকার্ডও ধরিয়ে দেন তিনি। দু’জনে একই সঙ্গে আটক হয়ে বাসে চেপে পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় যান।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)