ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি জুড়ে নিয়ে এগোতে চাইছে বাংলার কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যে কংগ্রেসের সাংগঠনিক স্তরে এ বার উত্থাপন করা হয়েছে নতুন প্রস্তাব।
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে এসআইআর-এর সময়ে বুথ লেভল এজেন্ট (বিএলএ) দিতে হবে স্বীকৃত সব রাজনৈতিক দলকে। নিয়ম অনুযায়ী, বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক বিএলএ-১ ঠিক করে দেবে রাজনৈতিক দলগুলি। সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের বুথগুলির জন্য বেছে নিতে হবে বিএলএ-২। অর্থাৎ বুথভিত্তিক প্রতিনিধিরা (বিএলএ-২) থাকবেন বিএলএ-১’র নীচে। এই পদ্ধতি মাথায় রেখেই দলের অন্দরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের প্রস্তাব, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে যাঁরা কংগ্রেসের প্রার্থী হতে আগ্রহী, তাঁরা নিজেরাই বিএলএ-১ হিসেবে দায়িত্ব নিন। তা হলে সম্ভাব্য প্রার্থী নিজের কেন্দ্রে বুথ আগলানোর তাগিদে বিএলএ-২ নিয়োগে বেশি দায়িত্ববান হবেন। তাতে ভোটার তালিকার সংশোধনের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নির্বাচনের সাংগঠনিক প্রস্তুতির কাজও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, মালদহ জেলার মালতীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক আল বিরুনি জ়ুলকারনাইন তাঁর নিজের কেন্দ্রে বিএলএ-১ হতে চেয়ে আবেদন করেছেন। ওই কেন্দ্রে তিনিই সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রথম দাবিদার। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির যুক্তি, আল বিরুনি যদি পারেন, তা হলে অন্যান্য প্রত্যাশীরাই বা বিএলএ-১ হওয়ার দায়িত্ব নিতে পারবেন না কেন? কংগ্রেসের একাংশের মত, বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হতে চাইলে বিএলএ-১ হতে হবে, একেবারে এই শর্ত দলের তরফে বেঁধে দেওয়া হোক। তবে কংগ্রেসের মতো সাংগঠনিক ভাবে শিথিল দলে এমন কড়া শর্ত প্রয়োগ সম্ভব নয় বুঝে বিষয়টি নেতা-কর্মীদের সচেতনতা ও আগ্রহের উপরেই ছাড়তে চাইছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করের কথায়, ‘‘বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের আঁতাঁতের জেরে এসআইআর নিয়ে ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা নানা রকম হুঙ্কার দিচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা আবার পাল্টা বলছেন। এই অবস্থায় সরাসরি মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। যাঁরা কংগ্রেসের প্রতীকে নির্বাচনে লড়তে চান, তাঁরা যদি নিজেরাই বিএলএ-১ হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং বিএলএ-২’দের দায়িত্ব বণ্টন করে বুথ স্তরে ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়ে মানুষের পাশে থাকেন, তার চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে!’’ তবে প্রদেশ সভাপতির সংযোজন, ‘‘ইতিমধ্যেই বিএলএ-১’দের অনেকের তালিকা দলে জমা পড়েছে। প্রার্থী-পদে ইচ্ছুকেরা সকলে যদি ‘টেকনিক্যালি’ বিএলএ-১ না-ও হতে পারেন, মানসিক ভাবে তাঁরা সেই ভাবেই প্রস্তুত থাকবেন— এটাই আমরা চাই।’’
এআইসিসি-র পরামর্শে বাংলায় সংগঠনকে চাঙ্গা করাই এখন প্রথম লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যেই বিধানসভা নির্বাচনে সব আসনে লড়াইয়ের কথা প্রদেশ নেতৃত্ব বলছেন। জেলা সভাপতিদের চিঠি পাঠিয়ে প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য তিন জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম জমা দিতে বলা হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দলে কিছু কম নেই। দলের জন্য ‘ইতিবাচক’ হিসেবে প্রাথমিক ভাবে ৩৯টি আসন চিহ্নিত হয়েছে, তার সঙ্গে আরও ১১টি জুড়ে ৫০টি রাখা হচ্ছে একেবারে প্রথম তালিকায়। তার পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে আরও ৫০ আসন ধরে মোট ১০০টি কেন্দ্রকে অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এই আসনগুলিতে দলের রাজ্য ও জেলা স্তরের পরিচিত নেতাদের প্রার্থী হওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছেন প্রদেশ সভাপতি।
শুভঙ্করের মতে, ‘‘নির্বাচন কমিশন কোনও সময়ই দিতে চাইছে না। এক বছর আগে থেকে শুরু না-করে এখন তারা এসআইআর করতে চায়, তার পরেই বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে! আমাদের তাই এসআইআর-এর সঙ্গেই নির্বাচনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি সেরে ফেলতে হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)