চলছে সমান্তরাল গর্ত খোঁড়ার কাজ। রবিবার। ছবি: পিটিআই।
কেটে গিয়েছে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা। দুর্ঘটনার দু’দিন পরেও উদ্ধার করা গেল না তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লিতে গর্তে পড়ে যাওয়া শিশুটিকে। রবিবার রাতের দিকে উদ্ধারকারীরা জানান, শিশুটি বেঁচে রয়েছে। নিশ্বাস নিচ্ছে। তবে জ্ঞান হারিয়েছে সে।
তিন বছরের খুদে, সুজিত উইলসন শুক্রবার বিকেলে খেলতে খেলতে গভীর নলকূপের জন্য খোঁড়া পরিত্যক্ত একটি গর্তে পড়ে যায়। এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে উদ্ধার করতে হাজির হন দমকল কর্মীরা। পরে হাত মেলায় রাজ্য ও কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দড়ির ফাঁসে শিশুর হাত আটকে তাকে উপরে তোলা, কাপড়ের থলি ফেলে শিশুটিকে উঠিয়ে আনা, মাটি সরানোর যন্ত্রের সাহায্যে গর্ত বড় করা, ‘সাকশন’ পদ্ধতি (যে ভাবে বহু ক্ষেত্রে মাতৃজঠর থেকে শিশুকে টেনে বার করা হয়)-সহ বহু ভাবে সুজিতকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হলেও এখনও পর্যন্ত সাফল্য মেলেনি। হাতে সময় কম। শিশুটিকে বাঁচাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার কাছে পৌঁছতে হবে। রবিবার সকাল থেকে তাই ওএনজিসি-সহ একাধিক সংস্থার আধিকারিকেরা মূল গর্ত থেকে ৩ মিটার দূরে একটি সমান্তরাল গর্ত খোঁড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের প্রধান সচিব জে রাধাকৃষ্ণন। তিনি বলেন, ‘‘৩০০ জন উদ্ধারকারীর মোট ছ’টি দল গর্তটি খুঁড়ছেন। তবে মাঝখানে পাথরের একটি স্তর থাকায় কাজের গতি বাধা পাচ্ছে।’’
শুক্রবার রাত থেকেই ঘটনাস্থলে রয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী সি বিজয়বাস্কার। সঙ্গে রয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী এন নাগার্জন। বিজয়বাস্কার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘শনিবার সকালেও বাচ্চাটির কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন কোনও সাড়া পাচ্ছি না।’’ রবিবার রাতের দিকে অবশ্য উদ্ধারকারীরা জানান, শিশুটি বেঁচে। সম্ভবত বেহুঁশ সে। তবে হাল ছাড়ার প্রশ্নই নেই। উদ্ধারকারী এক কর্মী বলেন, ‘‘সাড়া না পেলেও বুঝতে পারছি ও বেঁচে আছে। আমরা অক্সিজেন পাঠাচ্ছি। তবে এখনও ওকে খাবার বা জল দেওয়া যায়নি। এই মুহূর্তে সুজিত যেখানে আটকে, সেখানে কাদামাটি বেশি। আর ওটিই আসল সমস্যা।’’ তিরুচিরাপল্লির নাডুকাট্টুপাত্তির ওই পরিত্যক্ত গর্তটি কতটা গভীর তা নিয়ে প্রথম থেকেই ধন্দ রয়েছে। কেউ বলছিলেন তা ছ’শো ফুট, কারও মতে গর্তটি অন্তত হাজার ফুট গভীর। শুক্রবার প্রথমে তিরিশ ফুট নীচে সুজিত আটকে ছিল।
পরে প্রায় ১০০ ফুট গভীরে তলিয়ে যায় সে। উদ্ধারকারীরা জানান, রবিবার ‘এয়ার লক’ পদ্ধতি প্রয়োগ করে শিশুটির আরও গভীরে ঢুকে যাওয়া আটকাতে পেরেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সুজিতের জন্য প্রার্থনা শুরু হয়েছে। প্রার্থনা চলছে দক্ষিণের মন্দিরে মন্দিরেও। রবিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইটারে ‘#সেভসুজিত’ লিখে জানান, ‘‘আজ যখন দেশ জুড়ে দীপাবলির উদ্যাপন চলছে, তখন তামিলনাড়ুতে সুজিতকে বাঁচাতে সময়ের বিরুদ্ধে অন্য একটা লড়াই শুরু হয়েছে। প্রার্থনা করছি, ওকে যেন দ্রুত উদ্ধার করে মা-বাবার কোলে ফিরিয়ে দেওয়া যায়।’’ শিশুটিকে নিরাপদ ভাবে উদ্ধারের আর্জি রেখেছেন দক্ষিণী তারকা রজনীকান্ত। তামিলনাড়ুর আর এক নায়ক-রাজনীতিবিদ কমল হাসন বলেছেন, ‘‘নানা রকম যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাচ্চাটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্ধারকারীরা সকলেই ভীষণ চেষ্টা করছেন।’’ পাশাপাশি শিশুদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই ধরনের পরিত্যক্ত খোলামুখ গর্ত থাকলে মোটা জরিমানার দাবি তুলেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy