প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেস। তারপরে সমাজবাদী পার্টি। কংগ্রেসের পরে সব থেকে বড় দুই বিরোধী দল সিদ্ধান্ত নিল, প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীদের অপসারণের তিনটি নতুন বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে যোগ দেবে না।
সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ পর্বে মোদী সরকার একটি সংবিধান সংশোধনী বিল-সহ তিনটি বিল পেশ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্র বা রাজ্যের মন্ত্রীরা যদি পাঁচ বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে এমন-অপরাধে গ্রেফতার হয়ে টানা ৩০ দিন আটক থাকেন, তা হলে তাঁদের পদ চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এই বিলে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবারই বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে এই বিলের পক্ষে সওয়াল করেছেন। বিরোধী শিবির মনে করছে, বিরোধী শাসিত রাজ্য সরকারকে ইচ্ছে মতো অস্থির করে তুলতে এই বিল কাজে লাগানো হবে। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ আজই জানিয়েছে, ৩০ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের মামলা রয়েছে। কংগ্রেসের তেলঙ্গানা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, এনডিএ-র শরিক অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু, তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা সব থেকে বেশি।
সংসদে এই বিল পেশের পরে তা আলোচনার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস প্রথমেই এই কমিটিতে যোগ দেবে না বলে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল। আজ তৃণমূল সরকারি ভাবে জানিয়েছে, সংবিধানের ১৩০-তম সংশোধনী বিল লোকসভায় পেশের সময়েই বিরোধিতা করা হয়েছিল। তৃণমূলের মতে, যৌথ সংসদীয় কমিটি একটি প্রহসন। লোকসভায় সাংসদ সংখ্যার নিরিখে বিজেপি ও কংগ্রেসের পরেই সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে এ ভাবে বিরোধী শিবিরের দুই দল সংসদীয় যৌথ কমিটি বয়কট করেনি। সূত্রের খবর, তৃণমূল এ নিয়ে অন্য বিরোধী দলের সঙ্গেও কথা বলেছে। অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি তৃণমূলের সঙ্গে একমত হয়ে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই দলই মনে করছে, রাজ্যসভা ও লোকসভা মিলিয়ে যে যৌথ কমিটি হবে, তাতে বিজেপির কাউকেই চেয়ারম্যান করা হবে। তাতে বিজেপির সাংসদদেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। ফলে বিরোধীরা যতই প্রতিবাদ করুক, যৌথ কমিটি বিলের পক্ষেই সুপারিশ করবে। বিরোধীদের আপত্তি ‘ডিসেন্ট নোট’-এই আটকে থাকবে।
বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীদের জেলে বন্দি রেখে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বিলে। প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের কথা বলা হলেও সবাই জানে, প্রধানমন্ত্রীকে কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গ্রেফতার করবে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীদের গ্রেফতার করে বিরোধী সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা হবে। শরিক দলের নেতাদেরও লাগামে রাখা যাবে। বিজেপি এত দিন ধরে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের দলে স্থান দিয়েছে। সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগিয়েছে। এখন এই বিল এনে নৈতিক অবস্থান নিতে চাইছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “সংসদের গোটা বাদল অধিবেশনে মোদী সরকার রক্ষণাত্মক অবস্থানে ছিল। উপরাষ্ট্রপতি উধাও হয়ে গিয়েছেন। বিজেপি নতুন জাতীয় সভাপতি খুঁজে পায়নি। তার উপরে ভোট চুরি কেলেঙ্কারি। চাপের মুখে বিজেপি এ সব থেকে নজর সরানোর মরিয়া চেষ্টা করছে।”
সমাজবাদী পার্টি এবং তৃণমূল যৌথ কমিটিতে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কংগ্রেস কী করবে, সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আজ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, “দেখা যাক কী হয়! এই সব বিল সকলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য তৈরি করে আনা উচিত ছিল। তার বদলে বিরোধীদের ভয় দেখাতে, শরিকদের ধরে রাখতে এই বিল আনা হয়েছে। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও ভোট জোগাড় করতে এই বিল কাজে লাগানো হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)