জনপ্লাবন: শনিবারের ব্রিগেড। ছবি: সুমন বল্লভ।
তেইশ কণ্ঠে এক সুর। এক কথায়, এই ছিল শনিবারের ব্রিগেড। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা এ দিনের এই সমাবেশে দাঁড়িয়ে বিজেপি-বিরোধী সব দলই এক বাক্যে বলল, দেশে সরকার বদল করতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী কে, সে প্রশ্ন পরে।
আঞ্চলিক দলগুলিকে এক জায়গায় এনে এই রকম ‘ফেডারেল ফ্রন্টে’র ধারণা আগেই সামনে এসেছিল। উপস্থিতি ও অংশগ্রহণে এ দিন কার্যত সেই তত্ত্বেই স্বীকৃতি দিয়ে গেলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এক ঝাঁক অবিজেপি নেতা। শুধু তাই নয়, বক্তৃতায় বিজেপির বিরুদ্ধে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ লড়াইয়েও সম্মতিও দিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। আর সেই মঞ্চে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েই তা সমর্থন করেছে কংগ্রেস। জোটবদ্ধ লড়াইয়ে মমতার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে এ দিনের সভায় সনিয়া গাঁধীর লিখিত বার্তাও পড়েছেন কংগ্রেসের প্রতিনিধি তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। জোটের এই উদ্যোগে বিরোধীদের আস্থার জবাবে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘দেশের স্বার্থে সবাইকে এক সঙ্গে আসতে হবে। যেখানে যে শক্তিশালী সেখানে সে লড়াই করবে। দেশের এখন যৌথ নেতৃত্বের প্রয়োজন। আমাদের জোটে সবাই নেতা।’’
‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’—ব্রিগেডের সমাবেশে এই স্লোগানেই বিরোধীদের এক সূত্রে বাঁধতে চেয়েছিলেন মমতা। তাঁর সেই স্লোগানে গলা মিলিয়ে বিরোধী জোটের চেহারা অনেকটা স্পষ্ট করে দিয়ে গেলেন আঞ্চলিক দলের এই নেতারা। জম্মু কাশ্মীর থেকে আসা ফারুক আবদুল্লা, উত্তর প্রদেশের অখিলেশ যাদব-সতীশ মিশ্র, কর্নাটকের দেবগৌড়া-কুমারস্বামী অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বা তামিলনাড়ুর বিরোধী দলনেতা এম কে স্ট্যালিন— বিজেপির সমালোচনায় সকলেই ছিলেন খড়্গহস্ত। দিল্লিতে পরিবর্তনের ডাকে এ দিনের সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে একই ভাবে গলা মিলিয়েছেন অরুণাচলের গেগং আপাং ও দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল।
আরও পড়ুন: ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’, রাজপথে তৃণমূলীরা তুললেন মোদী বিরোধী ঝড়
সভায় এক ধাপ এগিয়েই ‘ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি’ তৈরি করার কথা বলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। তিনি বলেন, ‘‘হাতে মাত্র দু’মাস সময়। জোটের প্রবীন নেতাদের বলব, একটা ইস্তাহার তৈরি করুন। ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি। আঞ্চলিক দলগুলি আসন রফা নিয়েও কথাবার্তা শুরু করে দিক।’’ নেতাদের ভিড়ে জোটের প্রাথমিক শর্ত মনে করিয়ে আর এক প্রবীণ ফারুক বলেন, ‘‘বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে হবে। জোটের নেতারা নিজেদের দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করতে পারলে লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে।’’
গত একুশে জুলাইয়ের দলীয় সমাবেশে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে মমতা যে ফর্মুলার কথা বলেছিলেন, এ দিন তার প্রয়োজনও মেনে নিয়েছেন ব্রিগেডে আসা নেতারা। মমতা বলেছিলেন, যে যেখানে শক্তিশালী সে সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। এ প্রসঙ্গে সভায় প্রাক্তন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হা বলেন, ‘‘এই লড়াই এক বিশেষ মতাদর্শের বিরুদ্ধে। তাই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট বিভাজন ঠেকাতে বিরোধীদের সর্বত্র এক প্রার্থী দিতে হবে। তা করতে পারলে বিজেপি সাফ হয়ে যাবে।’’ আর এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী অরুণ শৌরিও বলেন, ‘‘বিজেপিকে হারাতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী করতেই হবে। আঞ্চলিক দলগুলি নিজের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে অঙ্ক করলে চলবে না।’’
তৃণমূলের সমর্থনে নির্বাচিত রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিও বলেন, ‘‘সব আসনে বিরোধীদের এক প্রার্থী হোক। যে যেখানে শক্তিশালী।’’ এ দিনের সভায় বিরোধীদের এই উৎসাহকে ঐক্যবদ্ধ চেহারা দিতে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy